ওয়ার্ক লোড ম্যানেজম্যান্ট ও রোটেশন পলিসি থেকে বিসিবি কত দূরে # হীরা
ওয়ার্ক লোড ম্যানেজম্যান্ট ও রোটেশন পলিসি থেকে বিসিবি কত দূরে ?
# হীরা #
ওয়ার্ক লোড ম্যানেজম্যান্ট এখনকার ক্রিকেটে নিয়মিত টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর জন্য একেবারেই আর দশটি সাধারণ ক্রিকেটীয় পলিসির একটি। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, ওডিআই সুপার লীগ,ওডিআই বিশ্বকাপ, টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি- এসব বৈশ্বিক আয়োজনে আন্তর্জাতিক দলগুলোর সূচি একেবারেই ঠাসা থাকে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন দেশজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগের আসর। একজন ক্রিকেটারের পক্ষে এতসব ম্যাচ খেলে ফিট থাকা অসম্ভব। এই কারণেই প্রয়োজন ওয়ার্ক লোড ম্যানেজম্যান্ট এর।
চাপ কমাতে ঠিক কোন কোন সিরিজ বা কোন ফরম্যাটটা একজন ক্রিকেটারের খেলা উচিত কখনো বোর্ডই ঠিক করে, কখনো আবার ক্রিকেটাররা নিজেরাই বেছে নেন ।
২০২১ এর জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। জানলে অবাক হবেন, ২০২১ এর জানুয়ারি থেকে ২০২২ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট ৫২ টি
আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। এসময়ে প্রত্যেকটি মাসেই (১মাস ব্যাতীত) বাংলাদেশ কোন না কোন আন্তর্জাতিক সিরিজ বা টুর্নামেন্ট খেলেছে। মাঝে ২০২১ এর জুন মাসে কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেললেও মে’র শেষ সপ্তাহে শ্রীলঙ্কা সিরিজ শেষ করে জুনের মাঝামাঝিতেই জিম্বাবুয়ের প্লেন ধরতে হয় দলকে।
ব্যস্ততার এখানেই শেষ নয়। এ বছরেও ক্যালেন্ডারের প্রত্যেকটি মাসেই বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সূচি রয়েছে। এমনকি আগামী কয়েক বছর আইসিসির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আসর থাকায় সব দলই এমন টানা ধকল এর মধ্য দিয়েই যাবে।
ওয়ার্কলোড ম্যানেজম্যান্ট এবং বায়ো-বাবল এর ধকল এড়াতে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড । প্রত্যেকটি সিরিজ এমনকি প্রত্যেকটি ম্যাচেই খেলোয়াড় অদল বদল করে খেলাচ্ছে তারা। ২০২১ এর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড ম্যাচ খেলেছে ৪৮ টি। এই ৪৮ টি ম্যাচে তারা ৪৬ জন খেলোয়াড় ব্যবহার করেছে। এই ৪৬ জনের মধ্যে অন্তত ৩৬ জনই ৫ বা তার অধিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। ইংল্যান্ডের এই রোটেশান পলিসি বেশ সমালোচিতও হয়েছে । অনেক ক্ষেত্রেই এই রোটেশান করতে গিয়ে ইংল্যান্ডকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। হারতে হয়েছে স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এর মত দলের কাছেও। তবে বৃহদার্থে এর সুফলই বেশি। ৪৬ জন খেলোয়াড় এর একটা বিশাল পাইপলাইন গত ১ বছর জাতীয় দলের অংশ, যে কোন মুহূর্তে জাতীয় দলের হয়ে খেলতে প্রস্তুত। হঠাৎ করে তাদের রুট, বাটলার, আর্চার, মঈন, স্টোকসদের মত মূল খেলোয়াড়রা ইনজুরিতে পড়লেও তাদের বিকল্প সবসময়ই প্রস্তুত থাকে। সম্প্রতি ভারত, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া,পাকিস্তান এর মত দলও কমবেশি এই পথে হাঁটতে শুরু করেছে। ভিন্ন ফরম্যাটে ভিন্ন খেলোয়াড় এবং নতুন নতুন খেলোয়াড়কে ঘিরে পরীক্ষা নিরীক্ষা এর মাত্রা বেশি হওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ অথবা শ্রীলংকার মত দলগুলোও খুব একটি পিছিয়ে নেই।
ওয়ার্কলোড ম্যানেজম্যান্টে বাংলাদেশ এর অবস্থান ঠিক কোথায়? এর উত্তর পেতে বেশি দূর আপনাকে যেতে হবে না। সম্প্রতি শেষ হওয়া আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন। প্রথম ২ ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করা বাংলাদেশের একাদশ টানা ৩ ম্যাচই ছিল অপরিবর্তিত! ‘মহামূল্যবান’ ১০ পয়েন্টের যে অজুহাতে একাদশে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি, ৩য় ম্যাচ বিশাল ব্যবধানে হেরে সেই অজুহাতের ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ।
এমন কান্ড নিয়মিতই করে আসছে বিসিবি। জানুয়ারি’২১ থেকে খেলা ৫২ ম্যাচে বাংলাদেশ ব্যবহার করেছে মাত্র ৩৫ জন খেলোয়াড়! প্রত্যেকটি ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ – এমন যুক্তি যারা দাঁড় করায়, তাদের হয়তো মাথায় থাকে না তাসকিন, শরিফুলরা তাদের ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’, যাদেরকে ব্যবহার করার জন্য সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর আছে। দু বছরে দুটি বিশ্বকাপ আছে। মাসখানেক আগেও পাকিস্তানের সাথে ২য় ম্যাচেই সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরেও ৩য় টি-টোয়েন্টিতে অহেতুক খেলিয়ে তাসকিনকে ফেলা হয়েছিল ইনজুরিতে । ফলাফলসরূপ, তাসকিনকে পাওয়া যায়নি টেস্ট সিরিজে যেখানে প্রথম টেস্টে অমন ‘লিটন কাব্যের’ পরেও (১১৪ ও ৫৯) হারতে হয়েছিল হয়তো তাসকিন এর একটি স্পেলের অভাবেই! ২১ বছর বয়সী শরিফুলরা বারবার ছুরিকাঁচির নিচে পড়া আরেকজন মাশরাফি যেন হয়ে না উঠেন সেদিকে কারো হুঁশই নেই। বিসিবির একক দোষ দিয়েও অবশ্য লাভ নেই। দায় আছে কিছু সিনিয়র ক্রিকেটারের ও। মুশফিক, রিয়াদরা এত বছর ক্রিকেট খেলার পরও এখনও স্বেচ্ছায় বিশ্রাম তো নেনই না, উল্টো নানা ইনজুরি বয়ে নিয়ে ‘হাফ-ফিট’ অবস্থায় হরহামেশাই নিতান্ত অগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পর্যন্ত খেলতে নেমে যান। এছাড়া বোর্ডের দেয়া ‘বিশ্রাম’ কে চূড়ান্ত অপমানজনক ধরে নিয়ে অভিমানী হওয়া তো এদেশের ক্রিকেটে নিত্য প্রথা!
তামিম বলেছেন তিনি ওয়ানডে সুপার লীগের’ শীর্ষ ৪’ এ থাকতে চান। এজন্য কোন রকম এক্সপেরিমেন্ট, বিশ্রাম এসবে তিনি বিশ্বাসী নন। লীগ টেবিলের শীর্ষ ৪ এ থাকা অথবা র্যাংকিং এ আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণও বটে। তবে ব্যাপারটা যখন ২২ বছর আগে টেস্ট স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত একটি দলের সামনে ২০২৩ বিশ্বকাপে কিছু করে দেখানোর সবচেয়ে বাস্তববাদী সুযোগ, তখন রিসোর্সে থাকা খেলোয়াড়দের পর্যাপ্ত বিশ্রামের মাধ্যমে ফিট রাখার পাশাপাশি রিজার্ভ বেঞ্চটাকেও নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষা করার কৌশল অধিক মূল্যবান হওয়া উচিত।
লীগ টেবিলে শীর্ষ ৪ এ থেকে, ‘কী-প্লেয়ারদের’ ইনজুরি এবং ‘ব্যাক-আপ অপশন’ এর অভাবে বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকেই বিদায়, পাছে ব্যাপারটা এমনটা না হয়ে বসে !
পরিচিতি
হীরা। চার্টার্ড একাউন্ট্যান্সী নিয়ে পড়াশোনা করে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির একাউন্টসে কর্মরত আছেন৷ ক্রিকেট দেখার পাশাপাশি ক্রিকেট নিয়ে লিখতে প্রচন্ড ভালবাসেন।
05.43, 04.03..2022