কিশোরী আমোনকর নেই, সুচিত্রা মিত্র নেই, নিলুফার ইয়াসমিন নেই। চলে গেলেন পাপিয়া সারোয়ার….
নিউজ ব্যাংক বাংলা :
বয়স বাড়ার একটা অলঙ্ঘনীয় অনুষঙ্গ হচ্ছে যে আপনাকে ধীরে ধীরে আপনার ভালোবাসার মানুষদের মৃত্যু সহ্য করতে হবে। কিশোরী আমোনকর নেই, সুচিত্রা মিত্র নেই, নিলুফার ইয়াসমিন নেই। চলে গেলেন পাপিয়া সারোয়ার। পাপিয়া সারোয়ার সম্পর্কে কখনো আমাদের প্রাণের অনুভূতি আমি ফেসবুকে লিখিনি। এই শিল্পীকে আমরা গুষ্ঠিশুদ্ধ সকলেই ভালবাসতাম।
কবে আমরা প্রথম শুনেছি ওঁর গান? তখন সাদাকালো টেলিভিশনের জমানা ছিল- অথবা সেই সময়টা যখন বিটিভিতে কিছু কিছু রঙিন অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয়েছে, কিন্তু আমাদের বাসায় তখনো রঙিন টেলিভিশন আসেনি। গান যে তিনি চমৎকার গাইতেন সেকথা তো আর আমার মুখ থেকে শুনবার দরকার নাই। আমি যেটা আপনাদের বলতে পারি সেটা হচ্ছে যে ওঁর উপস্থিতির মধ্যেই প্রাণের একটা স্বতন্ত্র রূপ পরিস্ফুট হতো যেটা আমাদের সবাইকে বাধ্য করতো ওঁকে ভালবাসতে।
আমার পিতামাতা দুজনেই খুবই ভালবাসতেন পাপিয়া সারোয়ারকে। ছায়ানটের প্রাক্তনী, বিশ্বভারতীর স্নাতক এইগুলি তো প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গীত শিক্ষা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আপনাকে দক্ষতা দান করবে- গাইতে পারবেন আপনি। কিন্তু আপনি শিল্পী হয়ে উঠবেন তখনই যখন আপনার প্রাণের স্পন্দনটি যে সুরে ও যে তালে বাধা, সেইটা আপনার কণ্ঠে সঞ্চারিত হবে। এইটা শিল্পীকে নিজেকে অর্জন করতে হয়, কেউ শেখাতে পারে না। পাপিয়া সারোয়ার ছিলেন সেই শিল্পী, যিনি সুরে আপনাকে ছুঁয়ে দিতেন অনায়াসে।
পাপিয়া সারোয়ার আর নেই এই কথা বলে শোক প্রকাশ করতে ইচ্ছে করছে না। মন থেকে সেই অনুভূতি আসছেই না। মানুষ প্রাণ ধারণ করে, জীবন যাপন করে এবং একদিন বিদায় নেয়, শিল্পী কি বিদায় নেয় কখনো? না।
রাজকাপুরের সিনেমার একটা গান আছে না ‘জিনা ইয়াহা, মরনা ইয়াহা’, সেই গানটা মনে পড়ছে। মুকেশ গেয়েছেন, ‘কাল খেল মে, হাম হো না হো, গরদিশ মে তারে রাহেঙ্গে সদা, ভুলেঙ্গে হাম, ভুলেঙ্গে তুম, পার হাম তুমহারে রহেঙ্গে সদা, রহেঙ্গে ইয়াহি, আপনে নিশানিয়া’।
পাপিয়া সারোয়ার আপনি তো রয়েছেন আমাদের পরানের গহীন ভিতরে। আপনার বিদায়ে আপনার অনুরাগী এই শ্রোতার চোখে যে দুই ফোঁটা চোখের জল দেখছেন- এটা ভালোবাসার অশ্রু।
লেখক : Imtiaz Mahmood
অন্য আলোয়। ফেসবুক থেকে।