গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভোল পাল্টে চট্টগ্রামের ২৮ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি জামাতের একটি অংশের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে কলেজে নিজের গদিরক্ষার জন্য মরিয়া হলেন অধ্যক্ষ হাসিনা মমতাজ জোনাকি …..
সদ্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর পত্নী হাসিনা মহিউদ্দিনের সাথে ২৮ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে একটি মামলায়। সেই মামলার আড়ালের ঘটনা খোদ মামলার বাদী জোনাকির মুখ থেকেই জানা গেল –
নিউজ ব্যাংক বাংলা :
বাবা ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি, ভাই যুবদলের নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কলেজ শিক্ষক সমিতির অংশের সদস্য। কলেজ পরিচালনায় অধ্যক্ষের দায়িত্বে থেকে ব্যাপক দুর্নীতি, লুটপাট ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠলেও আওয়ামী লীগের ছায়াতলেই নিরাপদে কেটেছে তার ১৬টি বছর।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভোল পাল্টে ‘বিএনপি-জামাতের হয়ে’ (!) চট্টগ্রামের ২৮ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করলেন তিনি ! সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি জামাতের একটি অংশের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে কলেজে নিজের গদিরক্ষা জন্য মরিয়া হলেন অধ্যক্ষ হাসিনা মমতাজ জোনাকি।
তবে বহুল সমালোচিত এই মামলার আড়ালের অনেক তথ্য ফাঁসও করলেন মামলাটির এই বাদী।
তিনি জানালেন, চাপ প্রয়োগ করেই সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত , পেশাজীবী ও সাংবাদিক নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, শুকলাল দাশ, তপন চক্রবর্তী ও দেবদুলাল ভৌমিক সহ মোট ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়।
নজিরবিহীন দ্রুততা ও রহস্যময় গোপনীয়তায় দায়ের হয় মামলাটি। মামলার আরজিতে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আব্দুল্লাহ এ আরাফাত ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে অন্য আসামিরা মিলে বিভিন্ন অপরাধ করেছেন বলে দাবি করা হয়।
সাংবাদিক ছাড়াও এই মামলায় ৪ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ১৭ জন রাজনৈতিক নেতা কর্মীকে অভিযুক্ত করা হয় । গত বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম জুয়েল দেবের আদালতে দায়ী হয় এ মামলা।
এদিকে অনুসন্ধানে প্রকাশ, আলোচিত এই মামলাটির বাদী হাসিনা মমতাজ জোনাকির ছোট ভাই জুয়েল রহমান বিএনপি সমর্থিত এক সাবেক মেয়রের পিএস এর সহযোগী । তিনি যুবদল নেতাও। সাবেক মেয়রের ওই পিএস অতি সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের দখল চেষ্টার ঘটনায় সরাসরি জড়িত এবং তিনি অর্থ কেলেঙ্কারিতে বহুল আলোচিত ‘এস আলম শিল্প গ্রুপে’র সাথেও যুক্ত। পলাতক এস আলম কর্ণধারের এত বিপুল অর্থ কোথায় জমা আছে তা অনুসন্ধানে বিএনপিপন্থী সাবেক মেয়রের সহযোগী ও এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট এই কথিত সাংবাদিকের উপরও নজরদারি অব্যাহত রেখেছে গোয়েন্দা সংস্থা। ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতারাও তাকে নিয়ে বিব্রত।
এদিকে অর্থখাতে লুণ্ঠন ঠেকাতে জিরো টলারেন্স অবস্থান আছে সরকারের। দেশ বিনির্মাণে নিয়োজিত ছাত্র সমাজেরও আছে স্বচ্ছতার প্রত্যয়।
সঙ্গত কারণেই সাংবাদিক শুভার্থীদের অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ছাত্র সমন্বয়কদের বিভ্রান্তি বা ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে গণমাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে চলতি সরকারের সাথে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরির অপচেষ্টা চলছে ?
মামলায় গোপনে উস্কানি দাতা ও সাংবাদিকদের বিষয়ে মিথ্যে ও বিকৃত তথ্য সরবরাহকারীদের মধ্যে রয়েছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান সহ নানাভাবে সুবিধা ভোগি কয়েকজন। ইতোপূর্বে তাদের একাধিক জনের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা অনুসন্ধানও শুরু হয়েছিল। তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে হত্যা , কারো বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন সহ একাধিক মামলা রয়েছ…..।
এদিকে এই মামলায় গোপনে উস্কানি দাতা ও সাংবাদিকদের বিষয়ে মিথ্যে ও বিকৃত তথ্য সরবরাহকারীদের মধ্যে রয়েছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান সহ নানাভাবে সুবিধা ভোগি কয়েকজন। ইতোপূর্বে তাদের একাধিক জনের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা অনুসন্ধানও শুরু হয়েছিল। তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে হত্যা , কারো বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন সহ একাধিক মামলা রয়েছে।
কেউ তো কোন কোন মাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন কার্যালয় থেকে বসে ষড়যন্ত্র করে তথ্য সরবরাহ দিয়েছেন। কেউ সাংবাদিকদের পেশাগত স্নায়বিক দূরত্ব , বিরোধ কিংবা নির্বাচনী পূর্ব তনবিরোধ কিংবা সম্ভাব্য নির্বাচনী প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এইসব করেছেন।
এরকম বিভিন্ন পক্ষ হতে নাম সুন্নিবেশিত হয়েছে আলোচ্য মামলার তালিকায়। যা এই মামলার খোদ বাদীর বক্তব্যের অসংলগ্নতায় এবং সহজ স্বীকারোক্তিতে প্রতিয়মান হয়, যেই স্বীকারোক্তি এই প্রতিবেদনেই সংযুক্ত থাকছে।
এদিকে বহুমাত্রিক এই অপশক্তির তৎপরতায় সাংবাদিকদের সাথে উত্তেজনা মুখর পরিস্থিতি তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র কিনা, তাতেও অনেকের ভাবনার উদ্রেগ ঘটিয়েছে।
আওয়ামীলীগ ও সমমনা সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এই মামলার বাদী হলেন খোদ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের ছোট ভাই তাসাদ্দুক উদ্দিনের স্ত্রীর বড় বোন। এবং একই সাথে তিনি সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের বন্ধু । তবে মামলায় যে এই যুব নেতা বন্ধু বাবরও আসামী , তাও জানতেন না বাদী !
জানতেন না কোন্ কোন্ সাংবাদিক আসামি , কিংবা সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর পত্নী হাসিনা মহিউদ্দিন এবং তাঁদের ছোট ছেলে সালেহীনও আসামি কিনা !
এদিকে মামলার বাদী যতই নিজেকে নিরপরাধ কিংবা ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে মামলা করা’র দাবি করুন না কেন তিনি মামলার এজাহারে নিজেকে কলেজ অধ্যক্ষ পরিচয় দিয়ে মামলাটি দায়ের করায় এ নিয়ে তৈরি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। কলেজের সব শিক্ষকই অনাস্থা ও দুর্নীতি সহ নানা অভিযোগ আপত্তি তুলেছেন এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরাও শিক্ষার্থীরাও তাকে তাঁর বিরুদ্ধে সভা সমাবেশ করেছে। এমন অবস্থায় কলেজ থেকে পালিয়ে যাওয়া এই অধ্যক্ষ কোন ক্ষমতার বলে বা কী বিবেচনায় একটি ‘রাজনৈতিক ও স্পর্শকাতর’ মামলায় নিজেকে কলেজটির অধ্যক্ষ পরিচয় দিয়ে বাদী হয়েছেন, তা অভিভাবক শিক্ষার্থী সহ কলেজের শুভানুধ্যায়ীদের মাঝে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
৩০ দিনের মধ্যে তদন্তের নির্দেশ পিবিআই‘কে :
চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম জুয়েল দেব এই মামলায় আনীত অভিযোগ পিবিআইকে তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীর করা অভিযোগ সরাসরি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিরও আবেদন করা হয়। আদালত তাৎক্ষণিক আদেশ না দিয়ে মামলার এজাহার বিস্তৃত পড়ে পরে আদেশ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করলে সাথে সাথে বাদী পক্ষের কয়েকজন আইনজীবী উচ্চবাচ্য করার চেষ্টা করেন। কিন্তু শুনানি শেষে আদালত বিকেলে আদেশ দেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী নূর ই খোদা বলেন, “মামলার আবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এরপর আদালত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে নির্দেশ দেন।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দিতে বলেন বিজ্ঞ আদালত ।
কী আছে বাদীর অভিযোগে ;
গত ৪ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিউমার্কেটে অবস্থান চলাকালীন পূর্বপুর ঘটনায় সংবাদপত্র-অনলাইন মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশে সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষাবলম্বন করা, শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকা, গণমাধ্যমের গাড়িতে করে ভারী অস্ত্র বহন, ছাত্র ও যুবলীগ নেতাদের হাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তুলে দেওয়ার অভিযোগে এই মামলা হয়। মামলায় ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের সময় হামলার ছবি তুলতে গেলে বাদীর উপরও সাংবাদিকরা চড়াও হন বলে অভিযোগ আনেন ।
মামলার যত ধারা :
মামলার আরজি -আবেদনে দণ্ডবিধির ১০৯, ১১৫, ১৫৩ (এ), ১৭৭, ২০২, ২০৩, ৩২৩, ৩২৬, ৩৪, ৩০৭, ৩২৯, ৩৩৮, ৩৪২, ৩৫৫, ৩৬৪, ৩৭৯, ৩৮৬ ও ৫০৬, ৫২৪ ও ৩৫৪ ধারায় এবং ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩,৪ ও ৬ ধারায় মামলা গ্রহণের জন্য বাদীর পক্ষে বলা হয়।
মামলায় যত আসামী :
মামলায় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত ছাড়াও সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতা হিসেবে আসামির তালিকায় রয়েছেন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক আজাদীর সিনিয়র রিপোর্টার শুকলাল দাস, সময় টিভি চট্টগ্রাম প্রধান প্রমল কান্তি দে কমল প্রকাশ কমল দে, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির অনুপম শীল, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী ( বাংলা নিউজ 24 ডটকম), বিএফইউজে এর যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী, নির্বাহী সদস্য আজহার মাহমুদ (বাংলাদেশ প্রতিদিন) রতন কান্তি দেবাশীষ ( c24 ), ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সভাপতি ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অর্থ সম্পাদক আলোকচিত্র সাংবাদিক রাশেদ মাহমুদ, সিনিয়র সাংবাদিক ও একুশে টিভির আবাসিক সম্পাদক রফিকুল বাহার, সাংবাদিক ও সংগঠক রমেন দাশগুপ্ত ( সারা বাংলা), সাংবাদিক ও জাতীয় ক্রীড়িবিদ উত্তম সেনগুপ্ত, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের গ্রন্থাগার সম্পদক ও লেখক মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন (সমকাল), ডিবিসির ব্যুরো চীফ মাসুদুল হক, সাংবাদিক ও সংগঠক ঋত্বিক নয়ন, আলোচিত সাংবাদিক ও সিআরবি সবুজ রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক আমিনুল ইসলাম মুন্না (আজাদী), চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী ( বিডি নিউজ), সাংবাদিক ও সংগঠক রাহুল কান্তি দাস (পূর্ব দেশ), সাংবাদিক ও সঙ্গীত শিল্পী সুবল বড়ুয়া (প্রতিদিনের বাংলাদেশ ), টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নারী নেত্রী রুনা আনসারী (দীপ্ত টিভি), চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক অর্থ সম্পাদক ফটো জার্নালিস্ট উজ্জ্বল কান্তি ধর, আমাদের সময়ের ব্যুরো প্রধান হামিদ উল্লাহ, সিনিয়র সাংবাদিক একরামুল হক বুলবুল, আয়ন শর্মা (চট্টগ্রাম প্রতিদিন প্রকাশক), বিশ্বজিৎ রাহা (প্রতিনিধি, দৈনিক পূর্বকোণ),স্বরুপ ভট্টাচার্য (সি প্লাস), সমরেশ বৈদ্য (ভোরের কাগজ)।
এছাড়াও এই মামলায় চারজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন –
শৈবাল দাশ সুমন, নুরুল মুস্তাফা টিনু, শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম, মোরশেদ আলম চৌধুরী।
সাংবাদিকরা ছাড়াও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে এই মামলায় আসামী হিসেবে রয়েছেন, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী ও চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, তাঁদের সন্তান বোরহানুল হক চৌধুরী সালেহীন, যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সনাতনী সম্প্রদায়ের কেন্দ্রীয় নেতা শ্যামল কুমার পালিত,
মহানগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, যুবলীগের জাহির রহমান সুমন, ওয়াসিম উদ্দিন, আরশাদুল আলম বাচ্চু, দিদারুল আলম মাসুম, সনৎ বড়ুয়া, সিরাজুল ইসলাম , এয়ার মোহাম্মদ ডুবুরি প্রমুখ।
অভিযোগ ও অসঙ্গতি :
মামলাটি পর্যবেক্ষণেও নানা অসঙ্গতি চোখে পড়ে। নারী শিক্ষকের দায়ের করা এই মামলায় মোট প্রায় ১০ ধরনের অভিযোগ করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে , বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের অপহরণ-নির্যাতন, ‘বিভ্রান্তিমূলক ও মিথ্যা’ সংবাদ প্রচার, স্বৈরাচারী সরকারের অপকর্ম ও দুর্নীতি ‘ধামাচাপা দেওয়া’, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলা-নির্যাতনের ছবি প্রকাশ না করা, আন্দোলনরত ছাত্রদের অপহরণ করে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে মিথ্যা মামলায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া, আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে বৈঠক করা, ৪ অগাস্ট নিউ মার্কেট মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেওয়া, এরপর সেদিন চেরাগী পাহাড় মোড়ে আসা শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করা, এসব ঘটনার বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ না করা, গণমাধ্যমের গাড়ি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের অস্ত্র পৌঁছে দেওয়া, ইত্যাদি।
একাধিক দিনের একাধিক ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়েছে মামলার আর্জিতে।কোন কোন স্পটে দুয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও কয়েকজন সাংবাদিকের উল্লেখ থাকার কথা বলে নাম উল্লেখ করা হয়।কিন্তু অন্যদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কোনো অভিযোগের উল্লেখ নেই। এমনকি কে কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাও সুনির্দিষ্ট করা হয়নি।
মামলার বাদীর সাথে কথা হয় নিউজ ব্যাংক বাংলা ডট কমের ।
কে এই মহিলা বাদী ?
মামলার বাদী হাসিনা মমতাজ প্রকাশ জোনাকি (৫৫) নগরীর কোতোয়ালি থানার নজির আহমদ চৌধুরী রোড বাই লেইন চেয়ারম্যান গলির বাসিন্দা । তাঁর বাবা সৈয়দ আবুল হাসেম চট্টগ্রাম নগর বিএনপির নেতা ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র গিয়েও তিনি বিএনপির সাথে সক্রিয় থেকেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানাধীন মোহরা ছায়েরা খাতুন কাদেরিয়া স্কুল এন্ড কলেজ অধ্যক্ষ এই মামলার বাদী।
এদিকে ব্যাপক তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি সমর্থকদের একটি গ্রুপই তাকে প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিতাড়িত করেন। তাঁর ক্ষমতার ‘অপব্যবহার’সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে আন্দোলনে নেমেছিল ছাত্রীরা। পাঁচ আগস্ট ক্ষমতার পথ পরিবর্তনের পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জোরপূর্ব পদত্যাগের জন্য শিক্ষার্থীদের ঘটনা পরম্পরার শুরুর দিকে সামাজিক মাধ্যমে দেশজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ‘দ্রুত অপসারণ জরুরি’ হিসেবে প্রকাশিত একটি তালিকায় এই অধ্যক্ষের নাম উল্লেখ ছিল। চট্টগ্রাম জেলা ও নগরে মাত্র দুইজনের নামই ছিল ওই তালিকায়।
অথচ তিনি ছাত্র আন্দোলনকালীন সময়ে আন্দোলনে পক্ষেই মাঠে ছিলেন।
NEWS BANK BANGLA এর বাংলার কাছে তিনি স্বীকার করেন যে, আন্দোলনের উত্তুঙ্গু সময়ে নিজের সন্তানের পীড়াপীড়িতেই তিনি একজন ‘সাহসী মা’ হিসেবে এই আন্দোলনে যুক্ত হন।
তাহলে রাজপথে এমন সক্রিয় থাকা একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেই বা কেন ‘গদি ছাড়া’র মতো পরিবেশ তৈরি হবে, সেই তথ্যও অবশ্য উঠে এসেছে আমাদের অনুসন্ধানে।
বাদীর আইনজীবীরা কে কী বললেন:
অধ্যক্ষ হাসিনা মমতাজ জোনাকির বাদী হয়ে করা এই মামলার অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন বাদীর অন্যতম আইনজীবী এনামুল হককে। তিনি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “আন্দোলনের সময় ছাত্রদের এবং বাদীকে মারধর করা হয়েছে– অভিযোগের এটুকু জানি। বাকি অভিযোগ বিষয়ে আমি জানি না।”
“ফাইলিং লইয়ার কে সেটাও জানি না। শুনানির সময় আমাকে থাকতে বলেছিল তাই ছিলাম। তবে পুরো সময় ছিলাম না।”
একই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান থেকে বাদী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী মো. রেজাউল ইসলামকে প্রশ্ন করা হয় । তিনি বলেন, “মামলার আবেদনে উনার নাম-ঠিকানা আছে, সেটাই উনার তথ্য। উনি একজন মহিলা। আপনার সাথে উনি টেলিফোনে এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করবেন।”
মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, “আবেদনে বিস্তারিত আছে। বাদী বলতে পারবেন কী কী অভিযোগ। আমার চেম্বার থেকে ফাইলিং করা হয়েছে। অনেক বড় অভিযোগ। আমি সব জানি না।”
বাদীর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি না ধরলেও কয়েক মিনিট পর অন্য একজন ব্যক্তি অন্য একটি মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে নিজেকে হাসিনা মমতাজ জোনাকির ভাই এস এম মহিউদ্দিন বলে পরিচয় দিয়ে গণমাধ্যমটিকে জানান, “আপনাকে এজাহার দিই? সেখানে বিস্তারিত আছে। আর কী জানতে চান? ”
মহিউদ্দিন দাবি করেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের সবাইকে বাদী চেনেন।
এদিকে NEWS BANK BANGLA. Com এর বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবের সাথে বাদির ভাই প্রদত্ত তথ্যের মিল নেই। বাদী স্বীকার করেছেন, তিনি যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনত , সেই প্রতিষ্ঠানের পদ থেকে দেশের অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মত তাঁকেও সরিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চলছে। চাপের মুখে একপর্যায়ে আদালতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও তিনি এই মামলা দায়ের করতে বাধ্য হন।
আড়ালের তথ্য ;
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র অবশ্য বলেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে বিএনপিপন্থী একটি প্রভাবশালী চক্রের আগ্রাসন ঠেকাতে বিএনপির অন্য একটি গ্রুপকে কাজে লাগাতেই শিক্ষিকা জোনাকির ভাইয়ের সম্পৃক্ততায় এই মামলাটি দায়ের প্রক্রিয়ার সূত্রপাত।
তবে মামলায় আসামীর নামের তালিকা তৈরি থেকে শুরু করে আদালতে দাখিল পর্যন্ত সমগ্র বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে রাজনৈতিক ও সাংবাদিকদের অভ্যন্তরীণ হ্রেষারেষির প্রক্রিয়ায় পৃথক গ্রুপের সমন্বয়েই। সাধারণ ছাত্র বা বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সম্পৃক্ততা এখানে নেই বললেই চলে। অবশ্য কুচক্রী মহলটি ক্ষেত্র বিশেষে এই মামলায় সাংবাদিকদের আসামির তালিকাটিকে
‘বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি নামের তালিকা’ বলেও চালিয়ে দেওয়ার অপপ্রচার চালাচ্ছে, যে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বশীলদের সতর্ক ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলেও সাংবাদিক সমাজ মনে করেন।
বাদীর স্বীকারোক্তি : খোলাখুলি দিলেন চাঞ্চল্যকর তথ্য –
মামলাটির বাদী হাসিনা মমতাজ জোনাকি মামলা দায়ের প্রক্রিয়ার পূর্বাপর অনেক কিছুই স্বীকার করেছেন। চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য উঠে আসে তাঁর ভাষ্যে।
অবশ্য এই সবটুকুই তিনি স্বীকার করেছেন নিউজ ব্যাংক বাংলা ডট কম এর উপদেষ্টা সম্পাদক এবং এ মামলায় অভিযুক্তদের তালিকার চার নম্বর অভিযুক্ত সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরী কাছেই।
মামলা দায়েরের দিনে আদালত থেকে নির্ভরযোগ্যদের মাধ্যমে খবর পেয়েই পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারন সম্পাদক হিসেবে নিজে সহ ২৮ জন সাংবাদিকের স্বার্থে নিজ দায়িত্ববোধ থেকেই মামলার বাদী শিক্ষিকা জোনাকির এই মামলা দায়েরের রহস্য জানতে শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরীর সহযোগিতা চান। এবং একজন পেশাজীবী নাগরিক হিসেবে জনাব আবু তাহের চৌধুরীর কাছে সাংবাদিকদের এই মামলা সংক্রান্ত ভোগান্তি বা বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতা চান। অধ্যাপক তাহের চৌধুরী নিজে প্রথমে সরাসরি কথা বলে তাঁর শিক্ষক সমিতির সদস্য হিসেবে হাসিনা মমতাজ জোনাকির এই মামলায় যুক্ত হবার বিষয়টি জেনে নেন। এবং তিনি এটিতে সাংবাদিকদের অযাচিত হয়রানীর আশঙ্কা করে এ ব্যাপারে উক্ত শিক্ষিকার সচেতন সুদৃষ্টি কামনা করেন।
অতঃপর তাঁর মধ্যস্থতায় সাংবাদিক নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরী সরাসরি মুঠোফোনে কথা বলেন মামলার বাদীর সাথে।
রিয়াজ হায়দার চৌধুরী তাঁকে বুঝানোর চেষ্টা করেন, ‘ অভিযুক্ত ২৮ জন সাংবাদিক মানে ২৮ টি পরিবার এবং ২৮ টি প্রতিষ্ঠান এতে যুক্ত। এটি শুধু ব্যক্তি সাংবাদিকের নিরাপত্তা বা স্বস্তি অস্বস্তির বিষয় নয়, মর্যাদারও বিষয়।’
একজন পেশাজীবীশিক্ষকহিসেবে পেশাজীবী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গিয়ে এমন অযাচিত অপরিণামদর্শী মামলার ভবিষ্যৎ পরিণতির বিষয়টিও ভাববার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন এই সাংবাদিক নেতা। অনতিবিলম্বে তিনি মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য বাদীকে একজন পেশাজীবী হিসেবে অনুরোধ জানান। অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরীও অনুরূপ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাদীকে বিষয়টি বিবেচনার জন্য বলেন।
এদিকে নানা প্রশ্নের জবাবে বাদী স্বীকার করেন যে, তিনি চাপের মুখে মামলার বিষয়টির ঠিক যেন কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি । তাছাড়া এই মামলায় এতজন সাংবাদিককে যে আসামি করা হয়েছে তাও তিনি জানতেনই না। এবং এইজন্য তিনি সত্যিই অনুতপ্ত।
NEWS BANK BANGLA এর কাছে উপদেষ্টা সম্পাদকের কাছে তিনি এও স্বীকার করেন যে , মামলাটি আদালতে দায়ের হওয়া পর্যন্ত তিনি মামলার অভিযোগের বর্ণনা পড়েও দেখেননি। তাড়াহুড়ো করে এজাহারে তার স্বাক্ষর নেয়া হয় !
পেশাজীবী নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর কাছে বাদী স্বীকার করেন, যে ২৮ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছেন তাঁদের দুইজন ছাড়া বাকি কাউকেই তিনি চিনতেন না । তাদের দুজনের নাম এবং নিজের বন্ধু হেলাল আকবর বাবরের নামও যে এই মামলার তালিকায় রয়েছে তাও তিনি জানতেন না বলে জানান।
মামলা দায়ের শেষে নিজ বাড়িতে ফেরার পর সন্ধ্যা সাতটায় বিএনপিপন্থী ঘনিষ্ঠ এক ‘আইনজীবী বন্ধু’ তাকে মামলার কপি পাঠিয়ে ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এরকম মামলা দায়েরে ভৎসনা করা’র পর তিনি প্রথম ‘বিস্ময়ের সাথে’ দেখেন আসামিদের তালিকা !
এই মামলায় নিজের নির্দিষ্ট আইনজীবী কে, তার পুরো নামও জানাতে পারেননি এই বাদী !
রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বাদীর কাছে জানতে চান, ‘তবে কি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী নারী নেত্রী হাসিনা মহিউদ্দীনও মামলাটিতে আসামির তালিকায় থাকার বিষয়টিও বাদী অবগত নন? ‘ এমন প্রশ্নে বাদী বিস্ময় ভরা জবাব দেন !
তিনি জানান, সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে বিএনপিপন্থীআইনজীবীর কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মামলাটির কপি পেয়েই তিনি এই বিষয়টি প্রথম জানেন !
রিয়াজ হায়দার চৌধুরী তাঁর কাছে এও জানতে চান, ‘ হাসিনা মহিউদ্দিনের মত একজন প্রবীণ নারী নেত্রীর বিরুদ্ধে একজন নারী হয়ে আপনার এরকম মামলা করাটা কি ঠিক হয়েছ ? ‘
-এমন প্রশ্নে নিজের অনুতাপের কথা উল্লেখ করেন মামলাটির বাদী হাসিনা মমতাজ জোনাকি ।
মহিউদ্দিন পুত্র সালেহীনও যে এই মামলার আসামি, সেটিও তিনি এই সাংবাদিক নেতার প্রশ্নের সুত্রেই প্রথম জানেন বলে জানান।
এতে রীতিমতো বিস্মিত হয়ে সাংবাদিক নেতা রিয়াজ বলেন, ” আপনার মত একজন দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে এমনটা আশা করিনি।”
মামলাটিতে উল্লেখিত কয়েকটি ঘটনার পরম্পরায় অসংলগ্নতা, অভিযুক্ত সাংবাদিকদের সম্পর্কে না চিনে না দেখে না জেনে মিথ্যে তথ্য উপস্থাপন, এবং আসামির তালিকা থেকে এস আলম গ্রুপের ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিকের নাম বাদ দিয়ে দেশের বাইরে থাকা আরেকজন উপজেলা প্রতিনিধির নাম অন্তর্ভুক্তি করা, কারাগার অভ্যন্তরে পূর্বেই মৃত্যুবরণ করা রাজনৈতিক এক কর্মীর নাম আসামি হিসেবে সংযুক্ত করা, এসবে কোন কিছুই জানতেন না বলে জানান বাদী জোনাকি ।
এদিকে নিউজ ব্যাংক বাংলার অনুসন্ধান কালে এও প্রকাশ , নিজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভূদ পরিস্থিতিতে তিনি পদত্যাগ না করে বাড়ি ফিরে যান । পরবর্তীতে কিছুটা স্থিরতা এলে কলেজটির বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাঁকে আপাতত এক মাস ছুটিতে থাকার জন্য পরামর্শ দেন।
ছোট ভাই জুয়েল রহমান মামলাটির জন্য তার সাথে মধ্যস্থতা করেন। ভাইয়ের পীড়াপীড়িতে তিনি বুধবার সকালে আদালতে যান। এর আগে মঙ্গলবার রাতেই তাকে আদালতে যাওয়ার তাগাদা দেন বলে স্বীকার করেন এই বাদী….
বাদী জোনাকির সেই প্রভাব বিস্তার করা ভাই, যুবদল নেতা
অন্যদিকে এই সুযোগে তাকে চাপ প্রয়োগ করে বিএনপিরই আরেকটি গ্রুপ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কাল্পনিক এ মামলা দাঁড় করিয়েছেন। সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতাদের বিদ্যমান বিরোধ কিংবা নির্বাচনী সাংগঠনিক গ্রুপিংকে পুঁজি করে কেউ কেউ তাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। তবে মামলার বাদী এক প্রশ্নের জবাবে স্বীকার করেছেন যে, বিএনপি জামাত পন্থী একাধিক আইনজীবী ও ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দানকারীরাই মামলার এজাহারে প্রদত্ত আসামিদের নামগুলো সংযুক্ত করেছেন, তাদের সাথে সংযুক্ত থাকা নিজের ছোট ভাই জুয়েল রহমান মামলাটির জন্য তার সাথে মধ্যস্থতা করেন। ভাইয়ের পীড়াপীড়িতে তিনি বুধবার সকালে আদালতে যান। এর আগে মঙ্গলবার রাতেই তাকে আদালতে যাওয়ার তাগাদা দেন বলে স্বীকার করেন এই বাদী।
সাংবাদিক নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে বাদী স্বীকার করেন যে,
আদালতে মামলা উপস্থাপনের ঠিক আগ মুহূর্তেই তাঁকে মামলার ড্রাফটি হাতে দেওয়া হয়। কিন্তু তখন তাড়াহুড়োর মধ্যে আর এজাহার না পড়ে তিনি বিজ্ঞ মহানগর হাকিমের প্রশ্নের জবাব গুলো দেন। তারপর বাদী পক্ষের আইনজীবীরা তাদের বর্ণনা উপস্থাপন করেন । মহানগর হাকিম জুয়েল দেব কিছুটা বিরতি দিয়ে মামলাটি পুরোটা পড়ে বিকেল তিনটায় আদেশ প্রদানের সিদ্ধান্ত জানান ।পরে বিকেলে প্রদত্ত আদেশে পিবিআইকে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়।
মিথ্যা মামলা : আট সাংবাদিক সংগঠনের নিন্দা
বাচবিচারহীনভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার ব্যাপারে সাংবাদিক সমাজ সহ পেশাজীবী অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রামে ২৮ সাংবাদিকের বিরূদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাংবাদিকদের আট সংগঠনের নেতারা। এ মামলাকে পেশাদার সাংবাদিকদের বিরূদ্ধে ‘স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের অংশ’ আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
মামলায় অন্য আসামীদের সাথে একাধিক সাংবাদিক নেতাসহ জাতীয় ও স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের আসামী করা হয়।
বিবৃতিতে বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা ও সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির সভাপতি খোরশেদ আলম ও সম্পাদক যীশু রায় চৌধুরী, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির উদ্দিন তোতা ও সাধারণ সম্পাদক লতিফা আনসারী রুনা, চট্টগ্রাম ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি রাশেদ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক রাজেশ চক্রবর্তী, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম এর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলতাফ, টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি শফিক আহমেদ সাজিব ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মামুন সাংবাদিকদের বিরূদ্ধে এ ধরণের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এর পেছনে স্বার্থান্বেষী মহলের দুরভিসন্ধি ও হীন উদ্দেশ্য রয়েছে। সাজানো এ মামলা সাংবাদিকদের সামাজিকভাবে অপদস্ত ও হেয় প্রতিপন্ন করা অপচেষ্টার অংশ।
বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ সবসময় যে কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঠিক চিত্র দেশবাসীর কাছে তুলে ধরেছে এই সাংবাদিকরাই। রক্তস্নাত একটি আন্দোলনের পর দেশের মানুষ যেখানে একটি নতুন বাংলাদেশ এর স্বপ্ন দেখছে, সেখানে মিথ্যা ও উদ্ভট নানা অভিযোগ এনে সাংবাদিকদের মামলার আসামী করার ঘটনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে এ ধরণের সাজানো মামলা থেকে সাংবাদিকদের নাম প্রত্যাহার এবং ষড়যন্ত্রকারী মহলকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, অন্যথায় সাংবাদিক সংগঠনগুলো এ ব্যাপারে কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া :
সামাজিক মাধ্যমেও অব্যাহত রয়েছে নিন্দা ক্ষোভের প্রকাশ। এমন সমালোচিত ও রহস্য ঘেরা মামলা প্রসঙ্গে দৈনিক সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার আব্দুল্লাহ আল মামুনের পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন না করলেই নয় ।
মামুন লিখলেন, “যে ২৮ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা সবাই এ শহরের পেশাদার সাংবাদিক। তাদের মধ্যে অনেকের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে। কিন্তু প্রতিবেদনে কখনো তার প্রতিফলন হয়নি। কর্তৃপক্ষীয় বাধ্যবাধকতা থাকলে সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু তারা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ লিখেন এবং লেখার যোগ্যতা রাখেন। অনেক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের আসামী করা হয়েছে, যারা এই শহরের সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। সংবেদনশীল মানুষ। “
আব্দুল্লাহ আল মামুনের সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া অভিমতে আরো বলা হয়,
“একই মামলায় এমন রাজনীতিবিদকেও আসামী করা হয়েছে। যার দ্বারা গত ১৫ বছরে বিএনপি-জামায়াতের কোন নেতাকর্মী নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে অন্তত আমার জানা নেই। “
মামুনের এই পর্যবেক্ষণটি খুবই বিবেচনার দাবি রাখে। তিনি লিখেছেন,
“যারা ‘গায়েবী মামলা’ দিয়ে ভিন্নমত দমনের ‘আওয়ামী স্টাইল’ অনুসরণ করছেন। তাদের একটি কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। প্রবল প্রতাপশালী স্বৈরাচারী হয়ে উঠা আওয়ামী লীগ সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। দলের সভানেত্রীকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।”
“ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আপনারাও ভিন্নমত দমনের ‘আওয়ামী স্টাইল’ অনুসরণ করছেন। এভাবে চলতে থাকলে আপনাদেরকেও একই পরিণতির জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। অবশ্য আপনারাতো এখনও ক্ষমতায়ও যেতে পারেননি। শিক্ষার্থীদের রক্ত সুধা পান করার চেষ্টা করছেন।”
সময় কাউকেই ছাড় দেয় না। প্রাকৃতিক প্রতিশোধ বলেও একটি কথা আছে ।
মামুনের মন্তব্যে আমাদের তাও ভাবনায় আসে। তরুণ এই সাংবাদিক নির্মোহভাবেই নিখাদ সচেতনতার তাগাদা থেকেই লিখেছেন, “যাদের সহযোদ্ধাদের রক্তের বিনিময়ে দেশের পট পরিবর্তন হয়েছে, তাদের উচিত ভিন্নমত দমনের এসব ‘স্বৈরাচারি কায়দা’ দমন করা। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যখন একটি সরকার হয়েছে, তারাই রাষ্ট্রের সংস্কার আনবে। সুতরাং সংস্কারের পিছু না দৌড়ে শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে যেন কোন লুটেরা ফায়দা লুটতে না পারে সেটি নিশ্চিত করা।”
“সাংবাদিকদের মা-বাবার নামসহ পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা আছে সাংবাদিকদেরই একটি সংগঠনে। সেখান থেকে সরবরাহ করা হয়েছে সাংবাদিকদের নাম-ঠিকানা।”
“আপনাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আপনার-আপনাদের সমর্থিত দল এখনো ক্ষমতায় যায়নি। এ কথাটি মনে রাখলে উপকার হবে।” #