পুলিশে বহিষ্কৃত হন ২৭ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার বাদী !

Must Read

নিউজ ব্যাংক বাংলা, চট্টগ্রাম :

পুলিশ বিভাগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন চট্টগ্রামের ২৭ পেশাজীবী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী সেই যুবক। নিজেকে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সহায়ক পরিচয় দিয়ে তিনি মামলাটি দায়ের করেন।এ নিয়ে ক্ষোভ অসন্তোষ চরমে উঠেছে সাংবাদিকদের ।‌ প্রশ্ন উঠেছে, রাজনীতিবিদদের নিয়েও।

বিএনপিপন্থী আইনজীবী রেজাউল ইসলাম চট্টগ্রামে ২৭ জন সক্রিয় পেশাদার সাংবাদিকসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। মামলায় ৭০ থেকে ৮০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে।

রেজাউল ইসলাম মামলার এজাহারে নিজেকে বিএনপি’র সদস্য এবং ‘জুলাই আন্দোলনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্পৃক্ত হতাহতদের আইনি সহায়তাকারী’ বলে দাবি করেছেন। অথচ  ফেসবুক আইডি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়,  আগে এই আইনজীবী রেজাউল ইসলাম আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের পূজারী ছিলেন। তার আওয়ামী লীগ সম্পৃক্ততার বেশ কয়েকটি ছবি পাওয়া যায়।

গতকাল মঙ্গলবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামি হওয়া সাংবাদিকরা হলেন-চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ, সহ সভাপতি সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম প্রতিদিন এর সম্পাদক হোসেন তৌফিক ইফতেখার, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাস, সিইউজে যুগ্ম সম্পাদক ওমর ফারুক,সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সৌরভ ভট্টাচার্য, সাবেক অর্থ সম্পাদক উজ্জ্বল কান্তি ধর, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক খোরশেদ আলম শামীম, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন  সাধারণ সম্পাদক রাজেশ চক্রবর্তী, টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সফিক আহমেদ সাজিব, দৈনিক আমদের সময়ের চট্টগ্রাম ব্যুরো ইনচার্জ হামিদ উল্লাহ, চ্যানেল ২৪ এর রিপোর্টার রনি দত্ত,দৈনিক সমকালের প্রতিবেদক আবদুল্লাহ আল মামুন, প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক জুয়েল শীল, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক উত্তম সেন গুপ্ত,পূর্বদেশের সাব-এডিটর শফিকুল ইসলাম, নিউজনাউ এর সাংবাদিক পার্থপ্রতিম নন্দী, ঢাকাপোস্ট ডটকমের প্রতিবেদক মিজানুর রহমান মিজান, এবং অন্যান্যরা হলেন-প্রদীপ শীল, রাহুল দাস, কমল দাস, রঞ্জিত কুমার শীল, বিশু রায় চৌধুরী, নাছির উদ্দিন, উজ্জ্বল দত্ত । অন্য ১১ জন অভিযুক্তকে ‘আওয়ামী সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে অভিযোগকারী নিজেকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার বিএনপির আইনি কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বিএনপি-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম (চট্টগ্রাম ইউনিট), ইউনাইটেড লয়ার্স ফ্রন্ট হিসেবে পরিচয় দিয়ে  তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

আইনজীবীদের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানান,আলোচ্য অভিযুক্ত রেজাউল ইসলাম আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার আগে পুলিশ বিভাগের সদস্য ছিলেন। বোধকরি এই পূর্বসম্পর্কের কারণেই সাংবাদিকরা হাতেনাতে ধরিয়ে দিয়ে অভিযোগ দায়েরের পরেও পুলিশি হেফাজত থেকে তাকে চিকিৎসার নামে ছেড়ে দেওয়া হয়। অসমর্থিত একটি সূত্র এমনটি মনে করছে।

রেজাউল পুলিশ বিভাগে কবে থেকে কবে চাকরি করেছেন, কি কারণে তার চাকরিচ্যুতি ঘটেছে , তা নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। তবে রেজাউল তার ঘনিষ্ঠদের কাছে পুলিশ বিভাগ থেকে নিজেই চাকরি ছেড়ে এসেছেন বলে দাবি করেছেন ‌।

সিইউজে সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ এক বিবৃতিতে বলেন, ৩০ এপ্রিল রেজাউল একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিলেন, তিনি ১ মে সাংবাদিকদের আনন্দ সম্মিলনী ব্যর্থ করবেন।আনোয়ারা পারকি সৈকতে ওই সম্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১ মে সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের সামনে সাংবাদিকদের পরিবহনের জন্য বেশ কয়েকটি বাস এসে অবস্থান করছিল। এ সময় রেজাউল ইসলামের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত বাসচালকদের কাছ থেকে চাবি কেড়ে নেয়। এর প্রতিবাদ করলে তারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। ফটোসাংবাদিক প্রদীপ শীলকে এ সময় তারা একটি সিএনজিচালিত ট্যাক্সিতে জোর করে তুলে অপহরণের চেষ্টা করে। স্থানীয় লোকজন এসে দুর্বৃত্তদের কবল থেকে সাংবাদিকদের উদ্ধার করে এবং হামলাকারী দুজনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আটক ওই দুজনের নাম রেজাউল ইসলাম (৩২) ও শহীদ ওরফে কোরবান আলী (২৬)। হামলাকারী অন্যরা পালিয়ে যায়।

সিইউজে সভাপতি -সাধারণ সম্পাদক বিবৃতিতে বলেন, আসল ঘটনা গোপন করে ২৭ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সিইউজে এ ব্যাপারে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সাংবাদিক নেতারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন।

রেজাউলের ​​আইনজীবী ইমতিয়াজ রেজা চৌধুরীর সাথে একাধিক যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মামলার বাদী রেজাউলও ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

রেজাউল ইসলাম এজাহারে অভিযোগ করেছেন, মে দিবসে জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদের কাছে শ্রমিক দলের একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে আসামিরা বাদীকে আক্রমণ করে, কারণ তিনি জুলাই আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করেছিলেন।

এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, ‘আক্রমণকারীরা তাকে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে এবং তার কাছ থেকে ৩০,০০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। আক্রমণের সময় ককটেল বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল, যার ফলে তার একটি চোখ আহত হয়েছে। পরে তিনি একটি টহলরত পুলিশ দলের আশ্রয় নেন এবং পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়েরের বিষয়ে আমি অবগত নই।’ তবে তিনি রেজাউলকে ‘বিএনপি কর্মী’ হিসেবে নিশ্চিত করেছেন।

মামলা দায়েরের ঘটনায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহ উদ্দিন রেজা ও দেব দুলাল ভৌমিক, টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সফিক আহমেদ সাজিব ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাশেদ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক রাজেশ চক্রবতী, টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির উদ্দিন তোতা, চট্টগ্রামে কর্মরত সাংবাদিক সম্মিলনী কমিটির সদস্য নওশের আলী খান, রফিকুল ইসলাম সেলিম, হোসাইন তৌফিক ইফতেখার, শিমুল নজরুল ও কামাল পারভেজ।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএমইউজে)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব সোহেল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ আরেফিন যুক্ত বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আইন পেশায় যুক্ত মামলার বাদী রেজাউল আটক অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে ১২ দিন পর সাজানো মামলাটি করে। তাকে অনুতপ্ত হয়ে মামলাটি প্রত্যাহার করতে হবে।

দায় নেবেন কি বিএনপি-বৈষম্য বিরোধীরা ?

হামলার পর মামলা ২৭ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আলোচিত এই মামলায় অভিযুক্তের তালিকায় দুই ভিকটিমের পরই রয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর নাম। ৫ আগস্ট এর পরে তাঁকে এ নিয়ে এক হালি মামলার আসামি করা হলো।

নিজের ফেসবুক ওয়ালে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় তিনি লিখেছেন, আবারো মিথ্যে মামলা দেওয়া হলো চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে । এই মামলায়ও যথারীতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে আসামি করা হল।

তিনি লিখেছেন, সিইউজে’র চার নেতা, প্রেসক্লাবের বর্তমান ও সাবেক ৩ নেতা, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ও টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের দুই নেতা, একজন সম্পাদক এবং গত পহেলা মে পেশাজীবী সাংবাদিকদের আনন্দ সম্মিলনীর আগে হামলায় আক্রান্ত তিন সাংবাদিকসহ ২৭ সক্রিয় পেশাদার সাংবাদিক আছেন আসামীর তালিকায়। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা সহ ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

যুবকটি মামলার এজাহারে নিজেকে বিএনপি’র সদস্য এবং ‘জুলাই আন্দোলনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্পৃক্ত হতাহতদের আইনি সহায়তাকারী’ বলে দাবি করেছেন। অথচ যুবকের ফেসবুক আইডি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়,  স্মরণকালেই / কিছুদিন আগেও এই যুবক আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের পূজারী ছিলেন। তার আওয়ামী লীগ সম্পৃক্ততার বেশ কয়েকটি ছবি পাওয়া যায়। এই যুবক কিভাবে পল্টি মারলেন, আওয়ামী লীগের সাথে বেইমানি করলেন, নাকি রূপ  পরিবর্তন করে চলতি সরকারের অনুসারী বা সমমনাদের সাথে বেইমানি করতে এলেন, আদৌ এর আড়ালে অন্য কিছু আছে কিনা, সে সব প্রশ্নও  উড়িয়ে দেওয়া যায় না।  “

সিইউজে সভাপতি ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী আরো  লিখেছেন, “সাংবাদিকদের উপর হামলার পর পরই হাতেনাতে ধরা পড়া এই যুবক ঘটনাস্থলেই পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে তার হামলাটিতে যুক্ত হওয়ার কারণ এবং নির্দেশদাতা এবং সংশ্লিষ্টতায় প্রেস ক্লাব দখলের সাথে সম্পৃক্ত বিএনপিপন্থী এক সাংবাদিক নেতার নাম স্বীকার করেছিলেন। এ নিয়ে ফুটেজ ও ছবি সংরক্ষিত আছে। কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমেও ইতিপূর্বে এসব প্রকাশিত হয়। তবুও নিন্দনীয়ভাবে ঘটনার ১২দিন পর মিথ্যে অভিযোগে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হল সাংবাদিকদের। “

‘মিথ্যে মামলায় কাউকে জড়ানো হবে না’, এমন প্রত্যয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের  একাধিক দায়িত্বশীল উপদেষ্টা ঘোষণা করে আসছিলেন। তবুও এমন বানোয়াট  মামলা হল !! 

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা তাঁর জন্মস্হান চট্টগ্রামে আসার ঠিক আগের দিনই এমন মামলায় সাংবাদিকদের অভিষিক্ত করা হলো ! মন্দ লোকেরা বলেন, ‘বিষয়টা খারাপ না ! দিন বদলের দিন বলে কথা ! ‘

সাংবাদিক নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরী লিখেছেন-‘অবশ্য কারা এমন প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ করছেন, ‘বিএনপি এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্পৃক্ত’ বলে পরিচয় ধারণ করে এসব মামলা যারা করছেন,  তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট ওই সংগঠনগুলো কি পেশাজীবী  সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন? এসবের দায় কি সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ নেবেন? 

নাকি এই প্রবণতা বিএনপি এবং বৈষম্য বিরোধী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র?  এসবের আড়ালে কারা আছেন? -এমন নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাংবাদিকসহ  সচেতন নাগরিকদের মধ্যে। আমার মত সাধারন নাগরিকের কাছে এসব প্রশ্নের উত্তর জানা নেই।  ” #

- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img
Latest News

তাপদাহে টেরীবাজারে বেলায়েত হোসেনের উদ্যোগে শরবত বিতরণ

নিউজ ব্যাংক বাংলা, চট্টগ্রাম: তীব্র তাপদাহে জনজীবন চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব...
- Advertisement -spot_img

More Articles Like This

- Advertisement -spot_img