প্রশান্ত বড়ুয়া, চট্টগ্রাম:
আগেও একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন দেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ। কাজের ন্যায্য স্বীকৃতি না পেয়েও দুঃখবোধ ছিল। -এ কথা জানান সাদী মহম্মদের পারিবারিক কনিষ্ঠজন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা।
প্রখ্যাত শিল্পী সাদীর মন জুড়ে চাপা অভিমান ছিল। মা ও বোনের মৃত্যু শোকও তাঁকে করেছে জর্জরিত। তবে কি
অভিমান থেকেই চলে গেলেন সাদি মহম্মদ ?
মায়ের কবরের পাশেই সমাহিত করা হয়েছে দেশের এই প্রখ্যাত শিল্পীকে । বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) জোহরের নামাজের পর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ওই মসজিদেরই কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
গুণী এই শিল্পীর শেষ বিদায়ে উপস্থিত ছিলেন তাঁর কাছের অনেকেই। উপস্থিত ছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, খু্রশীদ আলম, অপি করিম, অনিমা রায়, শামিম আরা নিপা, ফরিদা পারভীনসহ অনেকেই।
এর আগের দিন বুধবার (১৩ মার্চ ) রাত ৯টার দিকে সাদি মহম্মদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তাঁর ছোট ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ জানান, ইফতার সেরে এদিন সাদি সংগীত চর্চায় বসেছিলেন। এর কিছু সময় পর হঠাৎ
দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। তখন দরজা ভেঙে সাদির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এডিসি মৃত্যুঞ্জয় দে সজল জানান, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা, শিল্পী সাদি মহম্মদ
আত্মহত্যা করেছেন।’
জানা যায়, মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন সাদি। গত বছরের জুলাইয়ে মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ মারা যাওয়ার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। মা হারানোর বেদনা কোনোভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না। মায়ের কবরের পাশেই দাফন করা হয়েছে সাদি মহম্মদকে।…………………………………..
মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ ও পরে বোনের মৃত্যুর পর তার মধ্যে আত্মহত্যার বিষয়টি প্রবল হয়ে ওঠে। কাজের স্বীকৃতি পাননি বলেও অভিমান ছিল সাদি মহম্মদের। এর আগেও তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান নৃ্ত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা।
…………………………………………………………………….
তার পারিবারিক বন্ধু নৃ্ত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা বলেন, শিল্পীরাতো একটু অভিমানী হয়। অনেক কিছু নিয়েই হয়তো তারমধ্যে অভিমান ছিল, হয়তো আমরা ধরতে পারিনি। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে সাদি মোহাম্মদ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বলে জানান বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই নৃত্যশিল্পী।
বিশেষ করে গত বছর জুলাইয়ে তার মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ ও পরে বোনের মৃত্যুর পর তার মধ্যে আত্মহত্যার বিষয়টি প্রবল হয়ে ওঠে, বলছিলেন শামীম আরা নিপা। কাজের স্বীকৃতি পাননি বলেও অভিমান ছিল সাদি মহম্মদের। এর আগেও তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান এই নৃত্যশিল্পী।
এদিকে এই কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীতশিল্পীর মৃত্যুর খবর শোনার পর সংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। বাকরুদ্ধ হন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে শোকগাথা ।
দেশের বিশিষ্ট ডিজাইনার বিবি রাসেল লিখেছেন, যার জীবন আছে তার তো মৃত্যু হবেই – এটাই চিরন্তন সত্য !!! কিন্তু এটা কেমন মৃত্যু ? এটা কেমন চলে যাওয়া ? হয়তো অনেক অভিমান ও মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা বোবা কান্নাই সাদিকে এত দ্রুত চলে যেতে বাধ্য করলো… আমরা কি তাকে মূল্যায়ন করতে পেরেছি ? আজকে চারিদিকে শুধু চাটুকারদের আনাগোনা… হয়তো হারিয়ে যাবে আরো কোন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক এমন অভিমান নিয়ে… আর আমরা তার মূল্যায়ন করবো তার মৃত্যুর পরে… আমার দুঃখ প্রকাশ করার আর কোন ভাষা জানা নেই… ভাল থেকো সাদি…
নিউজ/লেখাটির বাকি অংশ দেখুন নীচের লিংক ভিডিও এর পর-
জামায়াত..শিবিরের রাজনীতি, আওয়ামীলীগ ও নির্বাচন নিয়ে আলোচিত টকশো :
মেজর জেনারেল অব ইব্রাহিম যা বললেন,
জানতে হলে লিংক চাপুন –
( ভালো লাগলে বন্ধুদের জানাতে লাইক ও শেয়ার দিন, প্লিজ ! )
খুশি কবির লিখেছেন- সাদি বেঁচে থাকবে চিরকাল তার সুরের মধ্যে, তার অমায়িক নম্রতা ও সভ্যতার মধ্যে, তার সুন্দর অন্তর এর মধ্যে। তুমি ছিলে অনন্য। চলে গিয়ে এই প্রমাণ করলে।
সুজিত মোস্তফা : সাদি মহম্মদ ভাই বা আমাদের প্রিয় সাদি ভাই, কাজটা একদম ঠিক করলেন না। আপনাকে কত মানুষ ভালোবাসে আপনি জানেন? আমাকে যতটা ভালোবাসা দিয়েছেন হয়তো বুঝতে পারেননি, আপনাকে আমি তার চেয়েও বেশি ভালবাসতাম। আপনি তো জানেন এখানে অভিমানের দাম নেই, তাই অভিমান করা তো বোকামি বৈ আরও কিছু নয়। ওপারে ভালো থাকুন সাদি ভাই, আমাদের ভালোবাসায় থাকুন।
সুবর্ণা মুস্তাফা : ক্ষমা করে দিও সাদি ভাই। তোমার কাছে চিরঋণী হয়ে থাকব আমরা। শান্তিতে মায়ের কোলে ঘুমাও। শ্রদ্ধা মহান শিল্পী।
সামিনা চৌধুরী : কেন সাদি ভাই, কেন? আমাদের কথা বাদ, শিবলী ভাইটার কথা একবার ভাবতে ভুলে গেলেন? কী কষ্ট হচ্ছিল মনের ভেতরে যে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন সাদি ভাই?
বন্যা মির্জা : সাদি ভাই, আর একটু বেশি বেঁচে গেলে কি আপনার অনেক বেশি কষ্ট হতো? যদি তাই হয়, তাহলে হয়তো ঠিকই আছে। আপনি যে কারণে-অকারণে কল করতেন, সেটা মিস করব। তারপর একদিন ভুলেও যাব। আপনার আত্মা শান্তি পাক।
চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন- প্রাচীন এই পৃথিবীতে জন্ম এবং মৃত্যু প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম।জন্ম যেমন আনন্দের,মৃত্যু ততোধিক শোকের।স্বাভাবিক মৃত্যুতে শুধুই শোক বিরাজমান….কিন্তু এ কেমন মৃত্যু????এ কেমন চলে যাওয়া???
পরিবার,সমাজ বা রাষ্ট্র এর কতটুকু দায় নেবে জানিনা,তবে সাদি ভাইয়ের মৃত্যু অন্য কোন অভিমান বা বেদনার কথা কয়ে যায়॥ কাল রাতে এই দূঃসংবাদটি শোনার পর থেকে ওনাকে নিয়ে কিছু লিখবার সাহস হচ্ছিলো না।
আবার প্রিয় শিল্পী সাদি মহম্মদের এমন ভাবে চলে যাওয়াটাও মেনে নিতে পারছিলাম না। তাঁকে নিয়ে ভাববার সময় কি আসলেই আমাদের হাতে ছিলো???যখন কোন মানুষ একান্তই একা হয়ে যায়,পৃথিবীর কোন মায়া যখন তাকে আর আটকাতে পারে না,তখনই সে এমন কিছু করে। আমরাই তাকে একা করে দিয়েছি, যোগ্য সম্মান দিতে পারিনি।
এই দেশটির জন্য সাদি ভাইয়ের পরিবারের আত্মত্যাগের কথাও নিশ্চয়ই আমরা ভুলে গেছি বা যাবো!!!
আমাদের ক্ষমা করে দিন সাদি ভাই…..আপনি স্বেচ্ছায় যেখানে চলে গেলেন, সেখানে ভালো থাকবেন॥
অসীম শ্রদ্ধা।
নাতাশা আহমেদ লিখেন, অভিমান ছিল, হতাশা ছিল, বিষন্নতাও হয়তো ছিল, এত মানুষের মাঝে থেকেও সাদি ভাই হয়তো ছিলেন একা, কাছের মানুষ যাকে বিশ্বাস করে ভালো বা খারাপ লাগার কথা বলা যায়, সব সময় judged না হয়ে জীবন যাপন করা যায় সে পরিবেশ হয়তো ছিল না, দেশের এ পরির্বতন হয়তো তাঁকে করেছিল নিরাপত্তাহীন, অসহায়! কে জানে? কেন আরো আগে তাঁর দিকে তাকাইনি আমরা যারা ওনার কাছের মানুষ ছিলাম? সাদি ভাই চলে গেলেও তিনি আমাদের জগতে থাকবেন সব সময়।
সাজিয়া ফারাহ ওবায়েদ নামের একজন লিখেন, এ দেশে কোনো কালেই মানীর মান নেই। কেবলমাত্র চলে গেলেই মরণোত্তর সম্মাননা দিয়ে বুঝ দেয়া হয়।
মিনা ভৌমিক নামে একজন লিখেছেন- খুব পছন্দের একজন শিল্পী। এদেশে গুণী মানুষের যথাযথ সম্মান দেওয়া হয় না। কতটা কষ্ট সইতে না পেরে এই পথ বেছে নিয়েছে। ভাবতেই প্রচণ্ড খারাপ লাগে।
প্রসঙ্গত, সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ ছিলেন শহীদ পরিবারের সন্তান। তাঁর জন্ম ১৯৫৭ সালের ৪ঠা অক্টোবর। তারা বাবা সলিমউল্লাহ ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ অবাঙালি প্রতিবেশীরা তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং তার বাবাকে বাড়ির সামনে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে তার নামেই মোহাম্মদপুরের সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন সাদি মহম্মদ। তবে তাতে মন বসেনি তার। সেসময়ই শান্তিনিকেতনে পড়ার সুযোগ পান তিনি। বৃত্তি পেয়ে ১৯৭৫ সালে সংগীত বিষয়ে সেখানে পড়তে যান তিনি। এরপর বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্র সংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
সেখানে শান্তিদেব ঘোষ ও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গান শেখেন তিনি।
সাদি মহম্মদ ছিলেন একাধারে শিল্পী, শিক্ষক ও সুরকার। রবীন্দ্র সংগীত ও আধুনিক গানসহ তার ষাটটিরও বেশি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তাঁর ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১২ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেয় চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি থেকে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার।
এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বীর মুক্তিযোদ্ধার এভাবে চলে যাওয়াকে সামগ্রিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনতো বটেই, বিশেষ করে সংগীতের ক্ষেত্রে একে দেখছেন এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। আর সবশেষ ঠিকানা হলো মোহাম্মদপুর জামে মসজিদের কবরস্থানে।
নিউজ/লেখাটির বাকি অংশ দেখুন নীচের লিংক/ছবি/ভিডিও এর পর-
ঢাকার বাইরের মানুষের অধিকার নিয়ে একটি আলোচিত বক্তৃতা :
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন । জানতে হলে লিংক চাপুন –
( ভালো লাগলে বন্ধুদের জানাতে লাইক ও শেয়ার দিন, প্লিজ !