‘এমভি জাহান মণি’ থেকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ । ১৩ বছর পর অভিন্ন ঘটনা। আক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের মালিকানা এক’ই, হামলাকারীও অভিন্ন দেশের। কেন এমন মিল ? কেন এমন অভিন্ন দস্যু হানা ?…
আন্তর্জাতিক নৌ বাণিজ্যের নিরাপত্তা ঘিরেও দেখা দিয়েছে নতুন উত্তাপ…..
‘এমভি জাহান মণি’ থেকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ । ১৩ বছর পর অভিন্ন ঘটনা। আক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের মালিকানা এক’ই, হামলাকারীও অভিন্ন দেশের।
কেন এমন মিল ? কেন এমন অভিন্ন দস্যু হানা ? এসআর শিপিং এর জাহাজই বা কেন এমন বারবার আক্রান্ত হচ্ছে ? কেনই বা তারা টার্গেট? কেউ কি আড়ালে আছে ? তবে কি আছে কারো অভিন্ন সংযোগ? -এসব নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জলদস্যুদের কবলে পরর পর থেকে ।
গতকাল দুপুর দেড়টায় জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয় মালিক কর্তৃপক্ষ। এতে করে আন্তর্জাতিক নৌ বাণিজ্যের নিরাপত্তা ঘিরেও দেখা দিয়েছে নতুন উত্তাপ।
চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’ ২০১১ সালের মার্চে যখন সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে তখন জিম্মি নাবিক ক্রুদের পরিবারের সদস্যদের আহাজারি চরমে উঠেছিল।
সে সময় আমি একুশে টেলিভিশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি । বাংলাদেশ প্রতিদিনে ব্যুরো প্রধান হিসেবে আমার যুক্ত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই এই ঘটনা। একাধারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কাজ করতে গিয়ে সেই ঘটনার অনেক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করার করতে পেরেছি।
দেখেছি অসহায় জিম্মি পরিবার গুলোর কান্না । মুক্তি পাওয়ার পরেও তাদের ট্রমায় আক্রান্ত দশা। ১৩ বছর আগের এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দেয় । আড়ালে থেকে যায় অনেক কিছুই । বিপুল মুক্তিপণে উদ্ধার পাওয়া সদস্যদের অনেকেই মুখ খুলতে চাননি।
এসআর শিপিং করপোরেশনের সেই জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’তে ওই সময় নারী সদস্য সহ ২৬ নাবিক ছিলেন ।
বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটিকে ঘিরে টানা জল্পনা কল্পনা উদ্বেগ উৎকণ্ঠারয় তিন মাস পর মুক্ত হয়। একটি ছোট উড়োজাহাজে করে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে সে সময় মুক্তিপণের টাকা পৌঁছে দেওয়া হয় বলে জানা যায়। তবে কর্তৃপক্ষ সেই ব্যাপারে তখন তেমন মুখ খোলেনি।সেই জাহাজটি সোমালিয়া থেকে ওমানের সালালা বন্দরে যায়।
১৩ বছর পর ফের একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজটি আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়।
মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে যাচ্ছিল এই জাহাজ। ‘গালফ অব ইডেনে’ জাহাজটিতে হামলা করে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। হামলার স্হানের দূরত্ব সোমালিয়া থেকে প্রায় ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে।
ভারী অস্ত্র নিয়ে প্রায় ৫০ জলদস্যু হামলার পর জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয়। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার বিষয়টি জেনে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে মালিক কর্তৃপক্ষ।
জাহাজটি আক্রান্তের তথ্য নিশ্চিত করে নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেছেন, ‘খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। জাহাজের ক্রুরা (নাবিক) নিরাপদে আছেন। তাদের উদ্ধার আন্তর্জাতিক যে প্রক্রিয়া ও কৌশল রয়েছে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ‘
ফিরে দেখা :
একই প্রতিষ্ঠানের অভিন্ন কায়দায় জাহাজ জিম্মি হওয়ার ঘটনা বিশ্লেষণের আগে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তর ভাগের খানিকটা চিত্র তুলে ধরা যাক।
সাধারণত: অগ্নিকাণ্ড,অপহরণ, দুর্ঘটনা, জিম্মি হওয়া বা দস্যু হানা, বিস্ফোরণ কিংবা কারো অপমৃত্যু, এসবের আড়ালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ইন্সুরেন্স দাবি, লোকশান এড়ানো, ঝুকি এড়ানো , দেউলিয়াতের প্রক্রিয়া , দলিল দস্তাবেজ গায়েব বা অভ্যন্তরীণ অনুধঘাটিত কোন ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার রহস্যময় আচরণের অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।
তবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এ প্রতিষ্ঠানটির ক্ষেত্রে আসলে কি ঘটেছে তা বিশ্লেষণের আগে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরভাগের এই খাতের খানিকটা চিত্র জেনে নেয়া যাক।
লেখাটির বাকি অংশ দেখুন নীচের লিংক ভিডিও এর পর-
কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এসআর শিপিং ২০০৪ সালে প্রথম জাহাজ কেনে। তাদের প্রথম জাহাজ ছিল ‘এমভি ফাতেমা জাহান’। কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের বহরে এখন ২৩টি জাহাজ যুক্ত আছে।
গতকাল জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজটির পুরোনো নাম ‘গোল্ডেল হক’। ২০১৬ সালে তৈরি হয় এই জাহাজ। ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজটি গত বছর কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং করপোরেশনের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এটির নামকরণ হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। তখন থেকে এতে করে সাধারণ পণ্য পরিবহন করে হচ্ছিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমূ আকুতি..
কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর দায়িত্বশীলরা গণমাধ্যমকে বলেছেন, জাহাজের ২৩ নাবিকের সবাই নিরাপদে রয়েছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জলদস্যুরা কোনো মুক্তিপণ দাবি করেনি বলে তাঁরা জানান। তবে জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত থাকার কথাও জানান দায়িত্ব শীলরা।
জিম্মি নাবিকদের মধ্যে ১১ জনের বাড়ি চট্টগ্রামে। দুজন নোয়াখালীর। বাকিরা টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, নওগাঁ, খুলনা, লক্ষ্মীপুর, সিরাজগঞ্জ,ফেনী, নাটোর, বরিশালের।
ভেসেল ফাইন্ডারের তথ্য :
বৈশ্বিক জাহাজের অবস্থান নির্ণয়কারী সাইট ভেসেল ফাইন্ডারের তথ্য অনুযায়ী, এমভি আবদুল্লাহ ৪ মার্চ মোজাম্বিক থেকে রওনা দেয়। এটি একটি কার্গো ভেসেল। মোজাম্বিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল এই জাহাজ।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম বলেন, ‘জিম্মিদের মধ্যে এক নাবিকের একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পেয়েছি। মেসেজে তিনি বলেছেন, জলদস্যুরা জাহাজটির দখল নিয়েছে। নাবিকদের কেবিনের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের কাছে ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে।’
এসআর শিপিং লাইনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্যাপ্টেন মেহরুল করিম বলেন, জাহাজটি ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা বহন করছিল ।
ক্যাপ্টেন মেহরুল করিম গণমাধ্যমকে আরো বলেন, ‘ঘটনাটি সোমালিয়ান উপকূলের প্রায় ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ঘটেছে। প্রথমে জাহাজের ক্যাপ্টেন আমাদের জলদস্যুদের আক্রমণের কথা জানান। আমরা তাকে যেকোনো মূল্যে তাদের ঠেকানোর নির্দেশ দেই। ১৫ মিনিট পর ক্যাপ্টেন একটি ইমেইল পাঠান, যেখানে তিনি জানান যে, জলদস্যুরা জাহাজের দখল নিয়েছে।’
ফেসবুক যা লিখলেন নাবিকরা :
‘আমরা সবাই সুস্থ ও নিরাপদে আছি। আমাদের প্রার্থনায় রাখুন।’ – সন্ধ্যায় এমনি ফেসবুকে পোস্ট করেন জাহাজের নাবিক আসিফুর রহমান ।
ফেসবুকে জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান লিখেছেন, ‘কারও সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। পাইরেটসরা আমাদের মোবাইলসহ সব যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে যাচ্ছে।’
জিম্মিদের পরিবারে আহাজারি :
দস্যু হানায় জিম্মি নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নাবিকদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগ আহাজারি দেখা দিয়েছে।
জাহাজে জিম্মিদের কয়েকজন–
কর্তৃপক্ষ সুত্র জানায়, জিম্মি নাবিকদের মধ্যে রয়েছেন ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ খান, দ্বিতীয় কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী, তৃতীয় কর্মকর্তা মো. তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম সাইদুজ্জামান, দ্বিতীয় প্রকৌশলী মো. তৌফিকুল ইসলাম, তৃতীয় প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিন, চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ, এবি মো. আনোয়ারুল হক, এবি মো. আসিফুর রহমান, এবি সাজ্জাদ হোসেন, ওএস জয় মাহমুদ, ওএস মো. নাজমুল হক, ওএস আইনুল হক, অয়েলার মোহাম্মদ শামসউদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশারফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস মো. নূর উদ্দিন ও ফিটার মো. সালেহ আহমেদ।
জিম্মিদের নিরাপত্তা ও নিরাপদে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়েছেন অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে।তারা এজন্য দোয়াও চেয়েছেন।
ছাত্রনেতা সজীব রিদওয়ানুল কবির তার ফেসবুক আইডিতে জাহাজের চিফ অফিসারের ছবি আপলোড দিয়ে লিখেছেন, ‘সোমালিয়ান জলদস্যুদের দ্বারা হাইজ্যাক হওয়া জাহাজের চিফ অফিসার আতিক মামার জন্য সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি….. মহান আল্লাহ যেন উনাদের সবাইকে হেফাজত করেন। ‘
নিউজ/লেখাটির বাকি অংশ দেখুন নীচের লিংক/ছবি/ভিডিও এর পর-
জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা চান, যেকোনো মূল্যে জিম্মিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেয়া হোক।
বারে বারে চট্টগ্রামের এই একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজে কেনো এমন দস্যু হানা, তার আড়ালে কোন ঘটনা আছে কী না, সে সব তথ্য উপাত্ত ও অনুসন্ধানে বের করে আনার তাগাদাও আছে তাদের।
( রিয়াজ হায়দার চৌধুরী: সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন – সিইউজে, সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য, চট্টগ্রাম মেডিকেল ইউনিভার্সিটি )
জামায়াত..শিবিরের রাজনীতি, আওয়ামীলীগ ও নির্বাচন নিয়ে আলোচিত টকশো :
মেজর জেনারেল অব ইব্রাহিম যা বললেন,
জানতে হলে লিংক চাপুন –
( ভালো লাগলে বন্ধুদের জানাতে লাইক ও শেয়ার দিন, প্লিজ ! )