নিউজ ব্যাংক বাংলা, চট্টগ্রাম:
গণজমায়েত, শোভাযাত্রা ও সেমিনার প্রাণময় হয়ে ওঠে ফুলের তোড়ায় হৃদ্যিক বরণ, মনোমুগ্ধ ইসলামি গীত, সালাতু সালাম, দরুদ-কিয়াম ও ছেমা মাহফিলের অনুসঙ্গে। এত সবে দুই অধিবেশন দারুন সাফল্য পায় ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম দরবার শরীফের উদ্যোগে মহান নবী (দ.) দিবস উদযাপন আয়োজন ।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট ২০২৩) যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয় এই আয়োজন।
নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রথম অধিবেশন এবং জামাল খান রোডস্থ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে,
৫৭০ ইংরেজি সনের ২৯ আগস্ট মানবজগতে মওলা নবী হযরত মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (দ.)’র আবির্ভাব স্মরণে মহান নবী দিবসের উদ্যোক্তা-ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন হযরতুল আল্লামা ছুফি ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ (হাফেজাহুল্লাহ বিশ্বানে ওয়াত্তাকরিম) এর উদ্যোগে ও নবী দিবস উদযাপন পরিষদ’২৩ এর ব্যবস্থাপনায় এবারের ১৪৫৩ তম ইয়ওমুন্নবী বা মহান নবী দিবস (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়সাল্লাম) উদযাপিত হয়েছে।
প্রথম অধিবেশনে দুপুর ২টায় জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে গণজমায়েত হয়।
দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে পায়রা অবমুক্তকরণ ও ২৯টি বেলুনে দিবসের প্লেকার্ড বেঁধে আকাশে উড়ানোর মধ্য দিয়ে দিবসটির কার্যক্রমের শুভ উদ্ভোধন করা হয়।
আল্লামা ছুফি ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ নবী দিবস উদযাপন পরিষদ, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ ও উপস্থিত সকলকে নিয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
সেখান থেকে পদব্রজে বর্ণাঢ্য একটি শোভাযাত্রা শুরু হয়। কাজীর দেউড়ি মোড়, আসকার দিঘীর পাড়, জামাল খান, চেরগী পাহাড়ের মোড় ঘুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এসে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়।
দ্বিতীয় অধিবেশনে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবস্থ বঙ্গবন্ধু হলে বিকাল ৩টায় শুরু হয় দিবসের মূল আয়োজন- সেমিনার।
মহান নবী দিবসের উদ্যোক্তা, চট্টগ্রাম দরবার শরীফের সাজ্জাদানশিন হযরতুল আল্লামা ছুফি ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ (মা.) এই অধিবেশনে সভাপতিত্ত্ব করেন।
সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, “নবী শুধু আরব্যদের নয়, মুসলমানদেরও নয়। নবী সমগ্র জগতের জন্য রহমাতুল্লিল আলামিন। তাই আমি বলি না, চট্টগ্রাম দরবার শরীফের আয়োজনে নবী দিবস। বরং এই নবী দিবস সবার পালনীয়। তাই একটি আলাদা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে এ দিবসটি উদযাপিত হয়।”
তিনি বিশ্বব্যাপী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ঐকবদ্ধ হয়ে নবী দিবস পালনের আহ্বান জানান।
পরিষদের মহাসচিব শাহজাদা ছৈয়দ সাইফুল আলম নাইডুর সঞ্চালনায় এই সেমিনারে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন মাইজভান্ডার দরবারস্থ গাউছিয়া রহমান মঞ্জিলের সাজ্জাদানশিন- আওলাদে রাছুল (দ.) ও আওলাদে গাউছুল আজম- হযরত শাহসূফি মাওলানা ছৈয়দ ছদরুল উলা মাইজভান্ডারী (মা.)।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মাইজভান্ডারি লেখক গবেষক অধ্যাপক ড. সেলিম জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব আবু সুফিয়ান, সূফীতত্ত্ব গবেষণা ও মানবকল্যাণ কেন্দ্রর সাধারণ সম্পাদক হাকিম মওলানা মুহম্মদ ইকবাল ইউসূফ, বিশিষ্ট লেখক, কলামিস্ট ও রাজনীতিক ড. মাসুম চৌধুরীর, কুমিল্লাস্থ রাজাপুর দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন শাহসুফি হযরত সৈয়দ দলিলুর রহমান রাজাপুরী, রাহে ভান্ডার দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন ও মোতওয়াল্লি আলহাজ্ব শাহজাদা খাজা নিজাম উদ্দীন ছালেকী, আস্তানায়ে উজিরিয়া হাশেমিয়া মাইজভান্ডারিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হযরত আলহাজ্ব ছুফি ছৈয়দ আবুল হাশেম মাইজভান্ডারি, জাতীয় বৌদ্ধ নেতা প্রণব রাজ বড়ুয়া, আনজুমানে মুহিব্বীনে আহলে বায়ত (আ.) বাংলাদেশের আহ্বায়ক মাওলানা নুরুল আবচার তৈয়বী, আজম ভান্ডার দরবার শরীফের মোন্তাজেম হযরত শাহজাদা সৈয়দ আলাউদ্দীন, মাষ্টার ভান্ডার দরবার শরীফের মোন্তাজেম হযরত সৈয়দ শফিকুর রহমান আরমান, আস্তানায়ে নজির ভান্ডার শরিফের নায়েব মোন্তাজেম হযরত মিনহাজুল আবেদীন রিফাত এবং চকরিয়াস্থ হারবাং শাহসুফি দরবারের মোন্তাজেম শাহজাদা মোহাম্মদ আবুল হাশেম সহ প্রমুখ।
প্রবেশ দ্বারে সস্মানিত অতিথিগণকে একে একে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেন পরিষদের সমন্বয়ক ছৈয়দ মশিউর রহমান রাহাত। অতিথিগণের জন্য শাহ মিডুর উপস্থাপনায় বিশেষ ভিডিও সাক্ষাৎকারের আয়োজন করে রাহে ভান্ডার ওয়েবস্ক্রাইবার্স।
হলের অভ্যন্তরে রাহে ভান্ডার ছুফি শিল্পী পরিষদের তত্ত্বাবধানে দুপুর হতে বিভিন্ন ইসলামি সংগীত পরিবেশিত হয়।
আয়োজনের শেষ ভাগে সালাতু সালাম, দরুদ-কিয়াম পরিচালনা করেন রাহে ভান্ডার ওলামা পরিষদের সদস্যগণ।
বিশিষ্ট কাওয়ালি শিল্পী কাওয়াল আবু তালুকদার হাবীবের পরিবেশনায় ছেমা মাহফিল শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন প্রধান অতিথি আওলাদে রাসুল হযরত শাহসূফি মাওলানা ছৈয়দ ছদরুল উলা মাইজভান্ডারী (মা.)।
এ আয়োজনে আগত সকলের মাঝে বিকালের নাস্তা ও অনুষ্ঠান শেষে দিবসের পবিত্র তবাররুক বিতরণ করা হয়।
শৃঙ্খলার দায়িত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রাহে ভান্ডার রয়েল ফোর্স ও চট্টগ্রাম দরবারের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের সদস্যবৃন্দ।