‘ডেথ জোন’ এ অক্সিজেন স্বল্পতায় একজন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে আধ ঘণ্টাও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এজন্য এভারেস্ট চূড়া জয় কারীকে অন্তত ১৬টি অক্সিজেন ট্যাংক সাথে নিয়ে যেতে হয়, যার প্রতিটি চার ঘন্টা করে গ্রহণের মত অক্সিজেন থাকে। তুষারপাত, তুষার ধস অক্সিজেন স্বল্পতা, শ্বাস আটকে মৃত্যু, স্ট্রোক কিংবা হঠাৎ ছিটকে পড়া খুব স্বাভাবিক। ফিরতি পথে অন্তত প্রতি ১০ জনে একজন মারা যান। মৃত্যু যেখানে হানা দেয় বার বার…
‘পৃথিবীর ছাদ’ যাকে বলা হয়, সেই এভারেস্ট চূড়া জয় করা মানে পৃথিবীকে জয় করার নামান্তর। পৃথিবীর এই ছাদকে বলা হয়ে থাকে ‘ডেথ জোন’। এতে অক্সিজেন স্বল্পতায় একজন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে আধ ঘণ্টাও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এজন্য এভারেস্ট চূড়া জয় কারীকে অন্তত ১৬টি অক্সিজেন ট্যাংক সাথে নিয়ে যেতে হয়, যার প্রতিটি চার ঘন্টা করে গ্রহণের মত অক্সিজেন থাকে। হঠাৎ ছিটকে পড়া মৃত্য যেখানে খুব স্বাভাবিক। মৃত্যু যেখানে হানা দেয় বার বার।
এমন দুর্মর এক সফল যাত্রায় এভারেস্ট জয় করে লোৎসের পথে এখন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সন্তান বাবর আলী।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯ হাজার ফুট উচ্চতায় নেপাল ও চীনের সীমানায় অবস্থিত এভারেস্ট শৃঙ্গ নিয়ে কৌতুহলের কমতি নেই। আছে এভারেস্টকে ঘিরে বাণিজ্য মনস্কতাও। এপ্রিল-মে মাস এলেই আরোহণের সুবর্ণ সময় ভেবে তাঁবুতে তাঁবুতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে বেইস ক্যাম্প। চীন ও নেপাল, দুই দিক থেকেই এভারেস্ট জয় করা যায়। এ দুটি দেশ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যে আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি পারমিট দিয়ে থাকে।
বাণিজ্যমনস্কতায় যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকা পর্বত আরোহন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যূনতম ৩৫ লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকারও বেশিতে আরোহনকারীদের সাহায্য দিয়ে থাকেন। যেন যত বেশি টাকা তত বেশি বেশি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে আরোহনের সুযোগ!
বিস্ময় শেরপা’রা…
আরোহণে সাহায্যকারী শেরপা’রা এ সময় দারুন ব্যতিব্যস্ত। তারাই আরোহনের সবচেয়ে নিরাপদ রাস্তা বের করে দেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এত বেশি উচ্চতায় পথ পেরুবার সব ধরনের কৌশল ও অভিজ্ঞতাই ঋদ্ধ শেরপা’রা নিজেরা প্রকৃতিগতভাবে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাদের ফুসফুসও বাড়তি অক্সিজেন ধারণের ক্ষমতা রাখে। পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই পর্বত আরোহীদের সাহায্য ছাড়া কারো পক্ষেই এভারেস্ট জয় করাও সম্ভব নয়। যেন সৃষ্টিকর্তার এক বিস্ময়কর মহান সৃষ্টি তারা !
যেখানে মৃত্যু হানা দেয় বার বার :
এভারেস্ট জয়ের পথে মৃত্যু যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। ফিরতি পথে অন্তত প্রতি ১০ জনে একজন মারা যান। তুষারপাত, তুষার ধস অক্সিজেন স্বল্পতা, শ্বাস আটকে মৃত্যু, স্ট্রোক কিংবা হঠাৎ ছিটকে পড়া খুব স্বাভাবিক। এমন জীবন ঝুঁকি নেওয়া এ আরোহন সফল হলেন বাবর আলী। ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাবর আলী এভারেস্ট চূড়া জয় করেছেন । আজ রোববার রোববার (১৯ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে এভারেস্ট শৃঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবর আলী।
এভারেস্ট চূড়াটি পর্বতের ১৫ হাজার ৫০০ ফুট ওপরে।
নিউজ/লেখাটির বাকি অংশ দেখুন নীচের লিংক ভিডিও এর পর-
ঢাকার বাইরের মানুষের অধিকার নিয়ে একটি আলোচিত বক্তৃতা :
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন । জানতে হলে লিংক চাপুন –
( ভালো লাগলে বন্ধুদের জানাতে লাইক ও শেয়ার দিন, প্লিজ ! )
বাবর আলীর এই অভিযানের সমন্বয়ক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, হিমালয়ের শীতিধার চূড়া জয়ের জন্য বাবর রওনা দিয়েছিলেন ১ এপ্রিল।
দীর্ঘ ১১ বছর অপেক্ষা করে সফল বাবর শুধু এভারেস্ট জয় করেই ফিরে আসছেন না, সঙ্গে লাগোয়া পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত লোৎসেও ওঠবেন।
একজন চিকিৎসকের এই যাত্রা বিপজ্জনক ও দুঃসাহসিক তো বটেই বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে এর মধ্য দিয়ে। কেননা, এভারেস্ট জয়ের পর লোৎসেতে এর আগে কোনো বাংলাদেশি সামিট করেননি।
কে এই বাবর আলী?
এভারেস্ট চূড়ায় লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করা বাবর আলী হাটহাজারীর বুড়িশ্চর এলাকার লিয়াকত আলী ও লুৎফুন নাহার বেগমের দ্বিতীয় সন্তান । বাবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১ তম ব্যাচে এমবিবিএস পাস করেন । কিছুদিন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন সময়ে অভিযানের ছুটি না মেলাতে চাকরির মোহ ত্যাগ করেন তিনি।চাকরিটা ছেড়ে ভ্রমণ শুরু করেন বিভিন্ন দেশে।
বাবর আলী সাইকেলে চড়ে যূমন দেশ ভ্রমণ যেমন করেছেন, তেমনি পদব্রজেও।লিখেছেন মৌলিক গ্রন্থ বিভিন্ন পত্রিকায় অনুবাদ এবং গল্পও লেখেন তিনি। এ পর্যন্ত তিনি বেশ কয়েকটি পর্বত শৃঙ্গ আরোহণ করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সাল থেকে বাবর আলীর পর্বতারোহণে পথচলা শুরু। চট্টগ্রামের পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য । এ ক্লাবের হয়েই বিভিন্ন পর্বত আরোহন করেন।
এভারেস্ট আরোহনের ফেলে আসা দিনগুলো :
পৃথিবীর মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের শতবর্ষের ইতিহাসে বাংলাদেশের হয়ে এর আগে ৫ জন এভারেস্ট জয় করেন।বাবর আলী ষষ্ঠতম এভারেস্ট জয়ী।
তাঁর আগে যারা এভারেস্ট জয় করেছেন, তাঁরা হলেন ,২০১০ সালের ২৩ মে মুসা ইব্রাহীম, ২০১১ ২১ মে এম এ মুহিত, ২০১২ সালের ১৯ মে এম এ মুহিত ও নিশাত মজুমদার , ২০১২ সালের ২৬ মে ওয়াসফিয়া নাজরিন, ২০১৩ সালের ২০ মে মোহাম্মদ খালেদ হোসাইন।
যেসব পর্বত আরোহণ করেন বাবর :
গত দশ বছরে হিমালয়ের নানান শিখরে অভিযান করা বাবর ২০১৭ সালে ভারতের উত্তরকাশীর নেহেরু ইন্সটিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। ২০২২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম দুর্গম ও টেকনিক্যাল চূড়া আমা দাবলাম (২২,৩৪৯ ফুট) আরোহণ করেন তিনি।
এ পর্যন্ত বাবর আলী মাউন্ট ইয়ানাম (৬ হাজার ১১৬ মি.), মাউন্ট ফাবরাং (৬ হাজার ১৭২ মি.), সারগো রি (৪ হাজার ৯৮৪ মিটার), সুরিয়া পিক (৫ হাজার ১৪৫ মি.), মাউন্ট চাউ চাউ কাং নিলডা (৬ হাজার ৩০৩ মি.), মাউন্ট শিবা (৬ হাজার ১৪২ মি.), মাউন্ট রামজাক (৬ হাজার ৩১৮ মি.), চুলু ইস্ট (৬ হাজার ০৫৯ মি.) ও মাউন্ট আমা দাবলাম (৬ হাজার ৮১২ মি.) পর্বতের চূড়ায় উঠেন।
বাবর আলীর এভারেস্ট জয় যেভাবে:
নেপালের উদ্দেশে গত ১ এপ্রিল দেশ ছাড়েন বাবর আলী। পর্বতারোহণের প্রয়োজনীয় অনুমতি ও নানা সরঞ্জাম কেনার কাজ শেষ করে কাঠমান্ডু থেকে লুকলার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সপ্তাহ খানেকের ট্রেকিং করেন। পৌঁছান এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে। মূল অভিযান শুরু হয় সেখান থেকেই। এভারেস্ট চুড়ায় চূড়ায় উঠতে সময় লাগে প্রায় দেড় মাসের মতো।
বেসক্যাম্প ম্যানেজার ও আউটফিট মালিকের বরাত দিয়ে অভিযানের সমন্বয়ক ফরহান জামান এভারেস্ট জয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ডেথ জোনে যোগাযোগ সম্ভব না, তাই অভিযানের ছবি পেতে সময় লাগবে। এখন বাবর আছেন ক্যাম্প-৪ এ নামার পথে, ওটি ডেথ জোনেই।’
‘ক্যাম্প-৪ এ নেমে মাঝরাতে আবারও শুরু করবেন দ্বিতীয় লক্ষ্যের পথে যাত্রা। সব অনুকূলে থাকলে ভোরে পৌঁছে যাবেন এর চূড়ায়।’
তিনি লোৎসেও জয়ের লক্ষ্যে বাবর আলীর জন্য সবার দোয়া চেয়েছেন।
এভারেস্ট লাগোয়া পর্বত লোৎসে পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ ।
ফরহান জামান জানান, লোৎসে এর আগে কোনো বাংলাদেশি সামিট করেননি এবং কোনো বাংলাদেশি একই অভিযানে দুইটি শৃঙ্গ চড়েননি।’
লক্ষ্য পূরণ হলে বাবার আলী করবেন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবেন।’- বলেন ফরহান জামান।
চট্টগ্রামেই যে কথা বলেছিলেন বাবর আলী :
নেপালের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগের দিন (গত ৩১ মার্চ) চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন বাবর আলী। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে পর্বতারোহণ ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’ আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, উপুর্যুপুরী এভারেস্ট ও লাগোয়া লোৎসে অভিযানে নিজের নেয়া চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে যাত্রা শুরু আগে বাবর আলী বলেন, ‘বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে জয় করা অনেকের স্বপ্ন। প্রতিবছর হাজারো পর্বতারোহী এভারেস্টের পথে হাঁটেন। কিন্তু এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার পর একই সঙ্গে আরেক পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে ওঠার চেষ্টা বাংলাদেশ থেকে আগে হয়নি। আমি সেই চ্যালেঞ্জটাই নিলাম। অর্থাৎ একই অভিযানে মাউন্ট এভারেস্ট ও চতুর্থ উচ্চতম পর্বত মাউন্ট লোৎসের চূড়ায় উঠব।’
বাবর আলী আরো বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জিং আর নতুন কিছু করতে পছন্দ করি। তাই এবার এভারস্টের সঙ্গে লোৎস জয় করার স্বপ্ন দেখছি।’
বাবর আলী সেদিন জানিয়েছিলেন, পুরো অভিযানে সময় লাগবে দুই মাস। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মে মাসের ৩য় সপ্তাহ কিংবা শেষ সপ্তাহে চূড়ায় আরোহণ করতে পারি। ’
নেপাল-তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত ২৯ হাজার ২৮ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টে অভিযান নিঃসন্দেহে দুরূহ একটা কাজ। একই অভিযানে ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট উচ্চতার মাউন্ট লোৎসে আরোহণের প্রচেষ্টা হয়ে ওঠেছে আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু।
এদিকে বাবর আলীর এভারেস্ট জয়ে সাফল্য উচ্ছ্বসিত গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমগুলো। ভূয়সি প্রশংসায় ভাসছেন তিনি নেটিজেনদের মনের আঙ্গিনায়।