শিক্ষকদের মর্যাদা সংকট, এক নিঃশব্দ প্রতিরোধের ডাক : ফেরদৌসী শান্তা

Must Read

শিক্ষক—সমাজের আলোকবর্তিকা, জ্ঞানের কারিগর, ভবিষ্যৎ নির্মাতাদের প্রকৃত পথপ্রদর্শক। অথচ, কী নির্মম বাস্তবতা! সেই শিক্ষকদেরই আজ মর্যাদার জন্য রাস্তায় নামতে হয়। দাবির জন্য সংগ্রাম করতে হয়। নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে হয়! এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে কি?

প্রধান শিক্ষক হোন বা সহকারী শিক্ষক—পরিস্থিতি সবার জন্যই একই। রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি যারা গড়ে তোলে, তাদেরই কি সবচেয়ে অবমূল্যায়িত হওয়া উচিত? যদি শিক্ষকগণই মর্যাদাহীন হন, তবে সমাজে প্রকৃত সম্মানের দাবিদার আর কে? দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ? অর্থ পাচারকারী? শোষকদের দোসর? নাকি সেই সুবিধাবাদী শ্রেণি, যারা শিক্ষকদের দুর্বল করে রাখার পাঁয়তারা করে? যুগের পর যুগ শিক্ষকদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছে অসৎ, অমানবিক ক্ষমতালোভী গোষ্ঠী। তাদের নীতি, তাদের উদ্দেশ্য একটাই—একটি দুর্বল, অনুগত, চিন্তাহীন সমাজ গড়ে তোলা।

শিক্ষকতা একসময় গর্বের পেশা ছিল। এখন হয়ে গেছে অবহেলার প্রতীক। এই পেশার ভেতরের বৈষম্য না দেখলে বোঝা যায় না , কী ভয়াবহ নিষ্পেষণ চলছে। যারা শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চায়, তারা অবহেলিত। যারা নতুন কিছু করার সাহস রাখে, তাদের পদে পদে বাধা দেওয়া হয়। তাদের প্রচেষ্টার কোনো স্বীকৃতি নেই, তাদের উদ্যমের কোনো কদর নেই। বরং চাটুকারদের জন্য উন্মুক্ত সব সুযোগের দরজা। যে যত তোষামোদ করতে পারে, সে তত বেশি সুবিধা পায়।

আমলাতন্ত্রের স্বার্থে, শাসকদের সুবিধার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে দুর্বল করে রাখা হয়েছে। দক্ষ, স্বাধীনচেতা, বুদ্ধিদীপ্ত নাগরিক তৈরি হলে শাসকশ্রেণি নির্বিচারে লুটপাট চালাতে পারত না। তাই তারা চায় অযোগ্য, দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা, যেখানে শিক্ষকরা থাকবে শোষিত, শিক্ষার্থীরা থাকবে বিভ্রান্ত, আর জাতি থাকবে চিরতরে পরাধীন মানসিকতার। তারা চায় “গোলাম”, কারণ গোলাম থাকলে শাসন সহজ হয়।

এই বৈষম্যের সূচনা হয় বিদ্যালয় থেকেই। যেখানে যোগ্য শিক্ষককে ‘অতি উৎসাহী’, ‘পণ্ডিত’ বলে ব্যঙ্গ করা হয়, আর চাটুকারদের মাথায় তোলা হয়। যেখানে মেধাবী শিক্ষকদের দমিয়ে রাখা হয়, তেলবাজদের সুযোগ দেওয়া হয়। যে সমাজ তেলবাজদের সমাদর করে, সে সমাজ পিছিয়ে পড়বেই। কারণ, যে শিক্ষা ব্যবস্থায় সত্যিকারের গুণীদের জায়গা নেই, সেই ব্যবস্থা কখনোই জাতিকে এগিয়ে নিতে পারে না।

এই অবস্থার পরিবর্তন চাই। শিক্ষকদের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। শিক্ষকতা কেবল একটা চাকরি নয়, এটি জাতি গঠনের এক মহৎ দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব যারা নেয়, তারা যদি সমাজে সম্মান না পায়, তবে জাতির ভবিষ্যৎও অন্ধকার। শিক্ষকরা যদি আজও নীরব থাকেন, তবে কাল আমাদের অস্তিত্বই সংকটে পড়বে। এই লড়াই শুধু শিক্ষকদের নয়, পুরো জাতির। কারণ, শিক্ষকদের মর্যাদা মানে জাতির ভবিষ্যতের মর্যাদা।

এখনই সময়—জাগ্রত হওয়ার, সংগঠিত হওয়ার, প্রতিরোধ গড়ে তোলার!
আর নয় অবমূল্যায়ন, আর নয় নীরবতা!
শিক্ষকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম আজ সময়ের দাবি!
একটি শক্তিশালী, মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য রুখে দাঁড়াতে হবে।
আমরা নত হব না। আমরা থামব না—আমাদের অধিকার আমরা আদায় করবই!

( লেখক পরিচিতি : ফেরদৌসী শান্তা সহকারী শিক্ষক, চরণদ্বীপ সিকদারীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম ।

ICT4E জেলা এম্বাসেডর a2i-Aspire to innovative . সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা শিক্ষক বাতায়ন।)

- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img
Latest News

বাবা ভান্ডারী’র ৮৯ তম ওরশ শরীফে লাখো ভক্তের ফরিয়াদ

নিউজ ব্যাংক বাংলা, চট্টগ্রাম: উপমহাদেশের প্রখ্যাত অলি, আধ্যাত্মিক সাধক শাহসূফি মাওলানা সৈয়দ গোলামুর রহমান (কঃ) মাইজভান্ডারী; প্রকাশ-বাবা ভান্ডারী কেবলার ৮৯তম...
- Advertisement -spot_img

More Articles Like This

- Advertisement -spot_img