ধারাবাহিক কলাম/ আজ প্রকাশিত হল: অষ্টম খন্ড
লেখক: সৈয়দ আমিনুল এহেসান ফেরদৌস আল-ক্বাদমী ।
সিফফীনের যুদ্ধে ইমামপাকের ভূমিকা:
সিফফিনের যুদ্ধে বিদ্রোহী মুয়াবিয়ার মোকাবেলা করার জন্য মাওলা আলী (আ.) ৯০ হাজার সৈন্য নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। মাওলাজী সিফফীন নামক জায়গায় তাবু ফেলে। প্রথমে মুয়াবিয়াকে বার বার দূতের মাধ্যমে বুঝানের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ন।
ফলে বিদ্রোহী গর্ভনর মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে খলিফা মাওলা আলী (আ.) এর যুদ্ধ করা ওয়াজিব হয়ে পড়ে।
উভয় পক্ষ ফোরাত নদীর পশ্চিম তীরে ‘আর রাক্কার’ নিকট ‘সিফ্ফিন’ নামক স্থানে মুখোমুখি হন। মুয়াবিয়ার বাহিনী পূর্বেই ফোরাত নদীর উপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে যাতে মাওলা আলী (আ.) এর বাহিনী এক ফোটা পানি ও না পায়। এজিদ (লা.)ও কারবালায় তার বাপের এ নীতিই পালন করেছিল। হযরত মাওলা আলী (আ.) তখন লোক মারফত জানালেন, “আল্লাহর নেয়ামত পানি থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কারও নেই।” মুয়াবিয়া জানালেন, যুদ্ধে সব কিছুই জায়েজ।
এর পর হযরত ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হোসেন (আ.) ও পিতার নির্দেশে বীরের মত যুদ্ধ করে ফোরাত নদী মুক্ত করলেন। মাওলা আলী (আ.) নির্দেশ দিলেন উভয় পক্ষের সৈন্যরা ফেরাতের পানি ব্যবহার করতে পারবে।
এরপর প্রকৃত যুদ্ধ শুরু হলো।
সিফফিনের যুদ্ধের অন্যতম ঘটনা হলো, রাসূল (সাঃ) এর প্রিয় সাহাবি হযরত আম্মার বিন ইয়াসির (রা.) ও মহান রাসূল প্রেমিক হযরত ওয়ায়েছ কুরনী (রা.) এর শাহাদত। নবীজি বলেছিলেন একদল বাগী বিদ্রোহী আমার আম্মারকে হত্যা করবে আর সিফফিনে হযরত আম্মার (রা.) কে মুয়াবিয়ার বাহীনি হত্যা করে মাথা থেকে দেহ আলাদা করে মুয়াবিয়ার সামনে পেশ করে।
বিস্তারিত অনেক ব্যাপক তাই সেদিকে যাবনা।
ইমাম হাসান (আ.) সিফফিনের যুদ্ধেও তার পিতার সাথে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। যুদ্ধে ইমামপাক একের পর এক মুনাফেকে জাহান্নামে পাঠায়। হজরত আলী (আ.) এর বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, তিনি সিফফিনের যুদ্ধে ইমাম হাসানের দুঃসাহসিকতায় এতটা শঙ্কিত হন যে, স্বীয় সঙ্গীদের বলেন, ‘হাসানকে এভাবে মরিয়া হয়ে যুদ্ধ করা থেকে নিবৃত কর, আমি তাকে হারানোর আশঙ্কা করছি।’
(নাহজুল বালাগার খুতবা নং ২০৭)
যুদ্ধ করতে করতে তার বীরত্ব পূর্ন ভূমিকায় মুয়াবিয়ার শিবির আতংকিত হয়ে উঠে।মুয়াবিয়ার অনেক বীর যোদ্ধারাও তার সাথে যুদ্ধ করতে সাহস পায়নি। তিনি সামনে, পিছে, ডানে, বামে অসামান্য রনকৌশলে একের পর এক মুনাফেকে পরাজিত করে মুয়াবিয়ার শিবিরের কাছাকাছি চলে গিয়ে ছিলেন। এ যুদ্ধে মুয়াবিয়া তার কাছে আবদুল্লাহ বিন ওমরকে এ কথা বলে পাঠায় যে, ‘যদি আপনার পিতার অনুসরণ থেকে বিরত থাকেন তাহলে আমরা আপনার পক্ষে খেলাফত ছেড়ে দিতে কোন আপত্তি করবেন না। কারন হযরত ওসমান (রা.) বাড়ি ৪০ দিন অবরোধ কালে আপনি খলিফার পক্ষে তার নিরাপত্তার জন্য পাহাড়াদার হয়ে অসমান্য ভূমিকা পালন করেছেন। এতে করে উমাইয়ারা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট। এটা ছিল মুয়াবিয়ার প্রতারনা।
সাইয়্যেদুনা ইমামপাক নানা রাহমাতুল্লিল আলামিন ও পিতা হায়দারে কার্রারের আদর্শে বড় হয়েছে। তাই এ ধরনের বিশ্বাসঘাতকদের প্রতিউত্তরে লা-জবাব দিয়েছিলেন।
ইমাম হাসান (আ.) উত্তরে বলেন, “কোরাইশরা ইসলামের পতাকা ভূলুণ্ঠিত করতে দৃঢ়চিত্ত ছিল। তবে আমার বাবা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ইসলামের জন্যে তাদের মধ্যেকার অবাধ্য ও বিদ্রোহী ব্যক্তিদের হত্যা করে তাদের চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দিয়েছিল। তাই তারা আমার পিতার বিরুদ্ধে শত্রুতার ঝাণ্ডা উত্তোলন করেছে।”
বদর, ওহুদ, খায়বার, খন্দক ও জামাল সহ সকল যুদ্ধে মুয়াবিয়া ও তার পূর্বপূরুষ গোত্রপতিরা, স্বজনরা ইসলামের ঘোরতর শত্রুছিল, তা চিরসত্য। অন্যদিকে আমার পিতার জুলফিকারের তলায় তাদের জাহান্নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে। এজন্য আজ উমাইয়াদের শত্রুতে পরিনত আমিরুল মু’মিনিন তা সকল মু’মিন মুসলমান আবগত।
মুয়াবিয়া চিরবিদ্রোহী সে আমিরুল মু’মিনিনের খলিফাতুল রাসুলের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে। আমার পিতা ফতেহে খায়বার, বদরের বীর সিপাহসালার। ওহুদে ইসলামের ডুবন্ত ঝান্ডা উত্তোলনকারী, খন্দকের যুদ্ধের আগে আমার নানাজান আমার পিতা সম্পর্কে বলেছেন খন্দকের দিন আলীর আঘাতের মর্যাদা জ্বীন ও ইনসান, উভয় জাতীর ইবাদতের চাইতে উত্তম। আমর ইবনে আবদে উদকে হত্যা করে সমস্ত কুফরকে পরাজিত করে এবং তাকে হত্যা করে ইসলামের পতাকা উড্ডয়ন করে।
যে আমর ইবনে আবদে উদ দুনিয়ার সেরা বীর ছিল। জীবিত উটের চামড়া ধরে টান দিলে চামাড়া উঠে আসত। মুসলমানদের কোন যোদ্ধাই তাকে মোকাবেলা করার সাহস দেখায়নি। আমিরুল মু’মিনিন তাকে মোকাবেলা করে পরাজিত করে জাহান্নামে পাঠায়।
আজ এই সিফফিন হল মু’মিন মুনাফেক চেনার উপায়। কারন আমার নানা বলেছেন ‘হক যেখানে আলী সেখানে’। আরো বলেছেন, ‘আলীকে কখনই মুনাফেক’রা ভালবাসবেনা’। আমার নানাজান আরো বলেছেন তার প্রিয় সাহাবী হযরত আম্মারকে একদল বাগি জাহান্নামীরা হত্যা করবে। আজ তাকে মুয়াবিয়া ও তার বাহীনি হত্যা করেছে। তাই মুয়াবিয়ার দল বিদ্রোহী বাগী চিরজাহান্নামী মুনফেকের দল প্রমানিত।
মুলত আহলে বাইতের সুমহান মর্যাদা ও তাদের বীরত্বপূর্ন ভূমিকার কারনে তাদের প্রতি আক্রোশ পুঞ্জিভূত হয়। ইমাম হাসান (আ.) ইসলামের পঞ্চম খলিফা। অথচ তারা রাজনৈতিক কুটকৌশল করে এ কথাটি মানুষের মন মগজ থেকে একেবারেই মুছে ফেলেছে। যা দুষমনি ছাড়া কিছুই নয়। একবার বা একদিনের জন্য কেউ রাষ্ট্রপতি হলে নাম মুছতে পারে? অথচ এই মহামানকে খেলাফত ছাড়ার ১০ বছরের মাথায় দুনিয়া থেকে বিদায় করে এই মহামানবের নামটাও মুছে দিয়েছে।
মুনাফেরা আহলে বাইতের সদস্য ইমামপাকের দুষমন, উমাইয়া বানরেরা ৮৯ বছর শাষনকার্য পরিচালনায়, আহলে বাইতের শান মান আজমত পবিত্রতা ভুলন্ঠিত করার জন্য। বিশেষ করে ইমাম হাসান (আ.) এর ব্যাক্তি ইমেজ, পবিত্রতা, সুনাম ক্ষুন্ন ও ওনার সম্মানহানীর লক্ষ্যে; তাহার নামে বহু বিবাহ, বহু তালাকের অপবাদ দেওয়া হয়েছে। কখনো ৭০ কখনো শতাধীক বিয়ে করেছে বলে বিকৃত ইতিহাস রচনা করেছে। যা ডাহা মিথ্যা কথা। Qoot alquloob এর গ্রন্থের রচয়িতা আবু তালিব আল মক্কী ইমামপাকের নামের সাথে বহু বিবাহ ও বহু তালাকের যে ইতিহাস তুলে ধরেছেন তা মিথ্যা কল্প-কাহিনীতে ভরপুর।
কারন ঈমানদারদের নেতা ইমাম হাসান (আ.) কখনো এত বিবাহ করতে পারে না। ইমামপাকের চরিত্রে কলিমা লোপন ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তৎকালীন বেশীরভাগ লেখক, ইতিহাসবিদরা মুয়াবিয়ার দ্বারা প্রভাবিত ছিল। এখনো তা বিদ্যমান আছে।
মুয়াবিয়া নিজে তার কুলাঙ্গার মুনাফেক দুষ্টু-দুরাচার নালায়েক ছেলেকে পরবর্তী শাষক নিয়োগ এবং তার নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য মাওলা ইমাম হাসান (আ.) কে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে। তা মানুষের মন মগজ থেকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার এটা একটা মিথ্যা প্রচারনা কৌশল ছিল উমাইয়্যা বানরদের।
(বিস্তারিত ইমামপাকের জীবনিতে থাকবে)।
এরই সূত্র ধরে জনগনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ইমামপাকের নামে বহু বিবাহ ও তালাকের নামে মিথ্যা বানোয়াট ইতিহাস কল্পকাহীনি রচনা করা হয়েছে। উমাইয়াদের জাল হাদিসের জাল ইতিহাসের ফ্যাক্টরী হতে পয়দা হয়েছে। যা একেবারেই মিথ্যা বানোয়াট কল্পনাপ্রসুত কথা।
যাক দুষমনে রাসুল (সা.) ও দুষমনে আহলে বাইত (আ.)’রা এই মহামানবের উপর জুলুম করেছে তা আজও বিদ্যমান আছে।
এসব মিথ্যা ইতিহাস পড়ে ইমামপাকের দুষমনরা এখনো তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে, যা আহলে বাইত (আ.)দের নামে জুলুম ও দুষমনি ছাড়া কিছুই নয়। মজলুম ইমামপাককে তারা একদিনও শান্তিতে থাকতে দেয় নাই।
নবীপরিবারের দুষমনরা সেকালে ছিল, এখনো আছে। তাদের প্রেতাত্মা এজীদি মুনাফেকে এখনো দুনিয়া ভরপুর। তাই এদের কাছ থেকে ঈমান আমল হেফাজত করে চলতে হবে। আহলে বাইত (আ.) কে চিনতে হবে নবীপরিবার চিনতে হবে। আর এই মহামানবদের দুষমনদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। তাহলে আমরা হুব্বে রসুল (সা.),হুব্বে আহলে বাইত (আ.) ও হুব্বে ইমান অন্তরে ধারন করতে পারব।
ইমাম হাসান (আ.) যে বছর ভুমিষ্ট হন তখন তাঁর মাতা সাইয়্যেদায়ে কায়েনাত হযরত মা’ফাতিমা যাহারার (সা.আ.) এর বয়স ছিল ১২ বছর (প্রায়)।
এরপর ইমাম হাসানের (আ.) জীবনের প্রায় ৭ বছর কাটে নানাজান রাহমাতুল্লিল আলামিন মায়ার নবীজি (সা.) গভীর সান্নিধ্যে। আর সাত বছরের কিছু বেশী সময় কাটে তার মহিয়সী জগতের শ্রেষ্ঠ সিদ্দিকা জননী সায়্যিদায়ে কায়েনাত হযরত মা’ফাতিমা-তুজ্জ জাহারা (সা.আ.) সাথে। অন্যদিকে প্রায় ৩৫ বছর কাটে তার মহান পিতা হযরত মাওলায়ে কায়েনাত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) এর সান্নিধ্যে ।
অতঃপর প্রায় ১০ বছর তার ইমামতকাল ছিল।
মাওলা ইমাম হাসান (আ.) একদা আব্দুল্লাহ (রা.)কে বলেছিলেন,
সিফফিন ? আল্লাহর আনুগত্যের বিপরীতে গিয়ে সৃষ্টির আনুগত্য।
হযরত ইমাম হাসান (আ.) পৃথিবীবাসী ও আসমানবাসীর প্রিয়তম।
অন্যত্র হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) কে ইমাম হাসান (আ.) আরও বললেন,
তাহলে আপনি এটা জানতেন যে, আমি পৃথিবীবাসীর কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং আসমানসমূহের অধিবাসীদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। তাহলে আপনি কেন আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন? কেন সিফফিনে আমাদের প্রতিপক্ষের সংখ্যাবৃদ্ধি করলেন?
আব্দুল্লাহ (রা.) বললেন,
আল্লাহর কসম! না আমি তাদের সাথে যোগ দিয়ে তাদের সংখ্যা বাড়িয়েছি, না তাদের হয়ে তলোয়ার হাতে যুদ্ধ করেছি। (অর্থাৎ, আমি যে তাদের পক্ষে ছিলাম, এটা আমি নিজে থেকে করিনি)। আমি শুধু আমার বাবার সাথে যুক্ত ছিলাম।
ইমাম হাসান (আ). বললেন,
আপনি কি এ বিধানের ব্যাপারে সচেতন নন, যে, আল্লাহর আনুগত্যের বিপরীতে গিয়ে সৃষ্টির আনুগত্য করা যায় না?
সূত্র: হাইসামি, আল-মাযমুয়া, খ. ৯, পৃ. ১৭৬। বাযযার বলেন, এ হাদিসের রাবিগণ আস-সহিহর রাবি (অর্থাৎ বুখারির রাবি অথবা অবশ্যই মুসলিমের রাবি)।
সাইয়্যেদুনা ইমামে আকবর ইমাম হাসান মুজতবা (আ.) ভুলে যাওয়া এক জান্নাতী যুবকদের সর্দার। আমরা এই মহামানব সম্পর্কে কেউ তেমন কিছুই জানি না, বা জানতেও চেষ্টাও করিনা। এই মহামানব সকল জান্নাতি যুবকদের সর্দার হবেন তা মায়ার নবীজি (সা.) পাক জবানে বলে গেছেন।
নবীজি বলেছে, হাসান, হুসাইন আমা থেকে থেকে, আমি হাসান, হুসাইন থেকে। এরুপ বলার কারন নবীজির নূর হতে ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.) এর সৃষ্টি। নবীজি আরো বলেছেন এই দুইজন আমার সন্তান যা হাকিকতের বিষয়, এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে এই পবিত্র মহামানবগন নবীজির নূর হতে সৃষ্ট। কারন নবীজিরতো সন্তান ছিল না। আর ইমামপাকদ্বয় নবীজির বায্যিক দৃষ্টিতে সন্তান নয়। তাদেরকে সন্তান বলা হাকীকতের বিষয়। তাহারা নবীজির নূর হতে সৃষ্টির কারনে।
মায়ার নবীজি (সা.) বলছেন আমি আল্লাহ তা’য়ালার সৌন্দর্যের দর্পন,
আর হাসান ও হুসাইন আমার সৌন্দর্যের দর্পন।
সৌন্দয্যের দর্পন বলার কারন দর্পনের ছায়া পরে’ আর ছায়া আসল নয়, আবার আসল হতেও পৃথক নয়।
রাসুল (সা.) আল্লাহ তা’য়ালার জ্ঞান, গুন, স্বভাব, সৌন্দর্যর ছায়া। সেই ছায়ারা হলেন হযরত ইমাম হাসান এবং ইমাম হুসাইন (আ.)।
একটু বিবেচনা করলেই বুঝা যায়, কাফেররা যেভাবে হুদায়বিয়্যায় নবীজির সাথে সন্ধি করেছে ঠিক তেমনি মুনাফেকগণের সেমাবেশে সিফফিনে মাওলা আলী (আ.) সহিত মুয়াবিয়ার সন্ধিচুক্তি এবং তৎপরবর্তীতে একই ভাবে ইমাম হোসাইনের সহিত মুয়াবিয়ার সন্ধিচুক্তি।
ঐতিহাসিক ভাবে দেখা যায় যথাক্রমে হুদায়বিয়া ও মোবাহালায় কাফেরদের সহিত নবীজি (সা.)’র ও মাওলা আলী (আ.)’র অনুসরণে সম্পাদিত হয় মুয়াবিয়ার সহিত সন্ধি।
সিফফিনেও মাওলা আলী (আ.) এর আমিরুল মু’মিনীন পদবি কেটে দেওয়ার জন্য আবু সুফিয়ানের পুত্র মুয়াবিয়া ও খারেজী মুনাফেকরা একই বাহানা করে। মাওলা আলী (আ.) হলেন বাবুল ইলম। অতীত বর্তমান ভবিষৎ সব তার জানা ছিল। তিনি আমিরুল মু’মিনিন কেটে দিয়েছেন। তাই তিনি কুলকায়েনাতের মু’মিনদের কেয়ামত পর্যন্ত আমিরুল মু’মিনিন বিদ্যমান আছেন থাকবেন।
এরপর সাইয়্যেদেনা ইমাম হাসান (আ.) কে সেই মুয়াবিয়া ও খারেজী মুনাফেকরা খলিফাতুল মুসলেমিন- আমিরুল মু’মিনীন পদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলে। অসম্ভব বিচক্ষন ত্যাগি জ্ঞানী ইমামপাক ইসলামের ক্রান্তিকালের কথা চিন্তা করে নানাজি কথা ও পিতার পথ অনুসরন করে শর্ত সাপেক্ষ্যে খেলাফত ছেড়ে দেয়। তাই দুনিয়াতে কেয়ামত পর্যন্ত খলিফাতুল মুসলেমিন হয়েই আছেন ও থাকবেন।
চুক্তি করার শর্ত মা’সুম হওয়া নয়।
নবীজি (সা.) অনেক অনেকবার সন্ধি করেছেন কাফিরদের সাথে। এই সন্ধি করার কারণে কি কাফিররা অনুসরণযোগ্য হয়ে গেছে ? তারা কি মা’সুম হয়ে গেছে?
সন্ধি রাজনৈতিক কারণে করতে হয়। মায়ার নবীজি (সা. ) কাফিরদের সাথে একটা সন্ধি করলেন। মদিনার সনদে সকল মদিনাবাসীকে এক জাতি ঘোষণা করলেন। ফলে মদিনার সব মুসলিম, সব ইহুদি, সব নাসারা, সব মাজুসি, সব মুশরিক সবাই মিলে এক জাতিতে পরিণত হল।
উম্মাতাও ওয়াহিদা।
সেটা রাষ্ট্রের জাতি। মানবজাতির জাতি। মুসলিম অর্থে ঐ জাতীয়তা নয়। মুসলিম জাতি এক অর্থে, মানবজাতি এক অর্থে, রাষ্ট্রীয় জাতীয়তা অন্য আর এক অর্থে।
নবীজি (সা.) চুক্তি করেছেন, তাতে তারা মাসুম প্রমাণিত হয় নাই। তারা চুক্তিভঙ্গ করেছে। তারা ছাড়া পায় নাই।
নবীজি (সা.) যার সাথে মুবাহিলা করতে গেলেন, তার সাথেও চুক্তি করলেন। তাহলে মুশরিক ওই নাজরানের খ্রিস্টানরা কি মুওয়াহিদ মু’মিন মুসলমান হয়ে গেল?
না হয় নাই। যার সাথে চুক্তি করতে যাওয়া হয়, তার সাথে মুবাহিলার মতো দুশমনিও থাকতে পারে। চুক্তির পর সে নাও বদলাতে পারে। চুক্তির পর সে বদলাবে না, সেটা জেনেই চুক্তি হতে পারে। চুক্তির পর সে তার বিশ্রী আকিদা বদলাবে না। এটা এড়িয়েই চুক্তি হতে পারে।
মায়ার নবীজি হুদায়বিয়ার সন্ধি করেছেন মক্কার মূর্তিপূজারীদের সাথে। তাতে করে মূর্তিপূজা কি হালাল হয়ে গেল?
তাতে করে কি আল্লাহর সাথে শরিক করা হালাল হলো ?
তাতে করে মুসলিমরা এই কথা বললো, ওকে আমরা শরিক করব না, কিন্তু তোমরা শরিক করো, তবু জান্নাতে যাবে।
লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়াদ্বিন।
নবীজি (সা.) চুক্তি করলেন মক্কার মুশরিকদের সাথে। তারা শর্ত দিলো, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ কেটে লিখে দাও, মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (দুরুদ) তিনি তা মেনে নিলেন।
এখন খারেজিদের মতো যদি বলেন, মক্কা বাসিদের সাথে চুক্তি করার জন্য নবীজি (সা.) নিজেকে রাসূলুল্লাহ পদ থেকে অপসারণ করেছেন?
সাবচাইতে বেশী আক্রোশটাতো তাদের মাওলায়ে কায়েনাতের সাথে ছিল। মাওলা আলী (আ.) সিফফিনে চুক্তি করার জন্য লোক পাঠালেন। সেখানে ঠিক সেই আপত্তি তোলা হলো। আমিরুল মু’মিনিন উপাধিটা কাটো। মাওলা আলী (আ.) বললেন, কেটে দাও। খারেজিরা বলল তাহলে আলী কি আমিরুল কাফেরিন?
নাউজুবিল্লাহ!
১- নবীজি (সা.) যদি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের পবিত্র হাতে কেটে থাকেন, তবে কি তার রাসূলুল্লাহ পদ বাতিল হবে?
২- মাওলা আলী (আ.) যদি আমিরুল মু’মিনীন উপাধি কেটে থাকেন, তার আমিরুল মু’মিনিন পদ কি বাতিল হবে?
৩- মাওলা ইমাম হাসান (আ.) যদি খলিফাতুল মুসলিমিন পদ ছেড়ে দিয়ে থাকেন, তার খলিফাতুল মুসলিমিন পদ কি বাতিল হবে?
না। কখনই না।
যে মিত্র নয়, কেবল তার সাথে চুক্তি করতে গেলেই যিনি দুনিয়ার সাইয়্যিদ ও আখিরাতের সাইয়্যিদ, তার সাইয়্যিদগিরি বাদ দিতে হয়।
নবীজি (সা.) যার সাথে চুক্তি করেন, সে চুক্তি ভঙ্গ করতে পারে। মাওলা আলী (আ.) যার সাথে চুক্তি করেন, সে চুক্তি ভঙ্গ করতে পারে। মাওলা হাসান (আ.) যার সাথে চুক্তি করেন, সে চুক্তি ভঙ্গ করতে পারে।
সিফফিনের যুদ্ধে মুয়াবিয়া বিদ্রোহ করে খেলেফায়ে রাশেদার বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন করে। মাওলায়ে কায়েনাতের উপর জনগনের জান-মাল রক্ষা ও খেলাফতের সম্মান রক্ষায় তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ওয়াজিব হয়ে যায়। এই যুদ্ধে মুয়াবিয়ার পক্ষে প্রায় ৪৫ হাজার মুনাফিক সৈন্য নিহত হয়। মাওলাজীর প্রায় ২৫ হাজার সাহাবী ও মু’মিন সৈন্য নিহত হয়েছে। হাজার হাজার পঙ্গু হয়েছে, আহত হয়েছে, চিরস্থায়ী পঙ্গুত্ব বরন করেছে, কত রক্ত ঝরেছে কত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে, কত পরিবার দুর্দশা গ্রস্থ হয়েছে তার হিসাব নাই। এ জন্য একমাত্র দায়ী মুয়াবিয়া। কারণ সে একজন এলাকার গর্ভণর হয় খেলাফায়ে রাশেদার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছে।
সে বিদ্রোহ করেছে। মুনাফেকি আচরণ করেছে। সাহাবীদের হত্যা করেছে, সাহাবীদের দেহ থেকে মাথা আলাদা করেছে। অন্যদিকে নাহরাওয়ানের যুদ্ধে অনেক লোক আহত, নিহত হয়েছে এই জঘন্য লোকটির কারণে।
মুয়াবিয়ার কারনে ইসলামের অগ্রযাত্রা অনেক ব্যাহত হয়েছে। সে ইসলামের সৌন্দর্য বিনষ্ট করেছে। মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করেছে। মানুষের জীবন বিষিয়ে তুলেছে। মানুষ নানা রকম সন্দেহের দোলাচলে ভুগেছে। কেউ বলে এই লোকটি সাহাবী ! কেউ বলে অহি লেখক ! আবার কেউতো জলিলুল কদর সাহাবী বানিয়ে ফেলে ! জলিলুল কদর সাহাবী হলো প্রথম একহাজার সাহাবীদের মধ্যে যারা অন্তরভুক্ত তাদের মধ্যে যারা আফজাল সাহাবী। যা সূরা তওবার ১০০ নং আয়াতে উল্লেখ আছে। বিস্তারিত অনেক ব্যাপক।
মুয়াবিয়া মক্কা বিজয়ের পর কলেমা পড়ে নামে মাত্র বশ্যতা স্বীকার করেছিল। আর একজন সাহবীর আচরন কি এরকম এত জঘন্য ! এত নিষ্ঠুর হবে ! এত প্রশ্নবিদ্ধ হবে ! এত কাপুরুষ হবে ! নবীপরিবারকে স্বমূলে ধ্বংস করার কামন বাসনা তার মধ্যে থাকবে ?
সাহাবীরা আসমানের নক্ষত্রের মত হবে, তারা পবিত্র হবে, সত্যচারি হবে, তারা উম্মতের দিশারী হবে, নবীজির ও নবীপরিবারের প্রতি জীবন উৎসর্গ করার মনসে চরিত্র গঠন করবে। এই লোকটি তার বাবাসহ মক্কা বিজয়ের পর উপায়ন্ত না দেখে তলোয়ারের ভয়ে বশ্যতা স্বীকার করে মুখে কলেমা পড়ে অন্তরে মুনাফেকি ধারণ করে ছিল।
মক্কা বিজয়ের পর কলেমা গ্রহণের পূর্বে উমাইয়া গোত্রপতিগন এবং কাফের মুশরিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে গোপন মিটিং করেছিল। তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল, যেহেতু নবীজির সাথে কোন যুদ্ধে তারা সফলকাম হতে পারে নাই, তাই তারা নামে মাত্র কলেমা পড়ে মুসলমানদের সাথে মিশে যাবে। সুযোগ বুঝে নবীপরিবারকে স্বমূলে শেষ করে দিবে। কেননা মুয়াবিয়া ইমাম হাসান আলাইহিস সালামের কাছ থেকে যুদ্ধ করে ক্ষমতা কেড়ে নিতে চেয়েছে নবীর পরিবারের সাথে দুশমনি জারি করে।
সে পঞ্চম খলিফা ইমাম হাসান আলইহিস সালামকে হত্যার পটভূমি ও তৈরি করেছিল। ইমামপাক সবসময় জামার নিচে বর্ম পরিধান করে নামাজ আদায় করতেন। যুদ্ধের আয়োজনের সময় মুয়াবিয়ার গুপ্তচর সৈনিকরা হত্যার উদ্দেশ্যে ইমামপাকের উপর আক্রমণ করে মারাত্মক আহত করে। এমন কি ইমামপাকের ঘোড়াকে পর্যন্ত আহত করে। তার জায়নামাজটি পর্যন্ত নিয়ে যায়। ইমামপাকের গায়ের আলখেল্লা পর্যন্ত খুলে নেয়। কিন্তু ইমামপাক ছিলেন মুসলিম মিল্লাতের ঐক্যের প্রতিক।
ইসলামের অগ্রযাত্রা যেন ত্বরান্নিত হয় তিনি সে দিকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। তাছাড়া জামাল যুদ্ধে, সিফফিনের যুদ্ধে, নহরাওয়ানের যুদ্ধে যেসব মানুষ আহত, নিহত হয়েছে। আহত হয়ে পরে মৃত্যূ বরণ করেছে তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকটা বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। মুয়াবিয়ার জঘন্য আচরণ, হিংসাত্মক মনোভাবের কারণে কঠিন শর্তসাপেক্ষে ক্ষমতা ছেড়ে দেন।
কিন্তু শর্ত ছিল আহলে বাইতের প্রতি কোনরুপ দোষারোপ করা যাবে না এবং আহলে বাইতের সম্মান অক্ষুন্ন রাখা হবে। ইমাম হাসান (আ.)’র কাছে আবার আবার ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। যদি ইমামপাক না থাকে ইমাম হুসাইন আলাইসিস সালামের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। কিন্তু মুয়াবিয়া অন্তরে ছিল জঘন্য হিংস্র উদ্দেশ্য। সে নিজে নির্দেশ দেয়ে ও গোপন ষড়যন্ত্রের জাল ফেলে ইমাম হাসানকেই বিষ প্রয়োগ করে হত্যাকরে। এ কুটচলের সুবাদে সে তার কুলাঙ্গার সন্তানকে ক্ষমতার উত্তরাধিকারী নির্বাচন করে।
এভাবে মুয়াবিয়া কারবালার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। ২২ হাজার মুনাফেক সৈন্যের বিরুদ্ধে ইমাম হুসাইন আলইহিস সালাম যে যুদ্ধ করেছে তা কালজয়ী তা মানুষের হৃদয়ে- মনের মনিকোঠায় চির-অম্লান হয়ে রয়েছে। তা কাল কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। মানুষের অন্তরের অন্তস্থলে গেথে থাকবে। দুশমনে রাসুল, দুশমনে আহলে বাইত এবং এজীদি মুনাফিকরা সব সময় আমার নবীপরিবারের প্রতি আঙ্গুল তুলেছে অস্ত্র ধারণ করেছে। তা না হলে কারবালার যুদ্ধের শেষে ইমাম হুসাইন (আ.) এর পড়নে যে জুব্বা মোবারকটি ছিল, সেটি ছিল আমার মায়ার নবীজির জুব্বা মোবারক, মায়ার নবীজির পাগড়ী মোবারক, মায়ার নবীজির পায়জামা মোবারক।
কতটুকু আক্রোশ থাকলে এই কাপড় গুলি শরীর থেকে খুলে নিতে পারে?
দেহ থেকে কুপিয়ে কুপিয়ে মাথা আলাদা করে এবং দেহ মোবারক বিকৃত করার মানসে দেহের উপড় ঘোড়া দাবড়ানো হয় ! ইমাম হুসাইনের আঙ্গুলগুলো কেটে টুকরা টুকরা করা হয়েছে। নবীপরিবারের মহিয়ষী নারীদের কান কেটে স্বর্ণালংকার লুট করা হয়েছে। আঙ্গুল কেটে হাতের আংটি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের তাবু জ্বালিয়ে দেয়ার হয়েছিল। এগুলি উমাইয়া হিংস্রতা। দীর্ঘদিনের বদর, ওহুদ, খন্দকের ও কারবালার প্রতিশোধ ছাড়া কিছুই না। আসলে তাদের এই আক্রোশ ছিল নবীজির প্রতিই !
সেই আক্রোশ নবীজির পরিবারের সাথে মিটিয়েছে। কারণ নবীজি বলেছেন আমার আহলে বাইত হল আমার আলী, আমার ফাতেমা, আমার হাসান, আমার হুসাইন। তারা আমার পরিবার।
দীর্ঘ সময়ে উমাইয়্যা ও আব্বসীয় শাষনকালে তারা আহলে বাইতের নাম, পরিচয়, শান ও মর্যাদা কেবল ধুলায় মিশিয়ে দেবারই চেষ্টা করেনি, মিথ্যা হাদিস রচনা করে আহলে বাইতের প্রতিটি সদস্যকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা করেছে।
আহলে বাইতের শান মান আজমত পবিত্রতা মর্যাদা কেউ বর্ণনা করলে তাকে নির্যাতন, নিপীড়ন, অত্যাচার, গুম ও হত্যা করা হতো। ফলে মুহাদ্দিসগণের কেউ কেউ জঙ্গলে লুকিয়ে হাদিস চর্চা করতেন।
যারা সাহস করে সত্য তুলে ধরতেন তাদের উপর নেমে আসতো অবর্ণনীয় নির্যাতন। ফলে মিথ্যা হাদিস মুসলিম সমাজে প্রাধান্য পায় এবং আহলে বাইত আতহারগণ ধীরে ধীরে স্মৃতির অতল গভীরে তলিয়ে যেতে থাকেন।
এখন যদিও উমাইয়্যা শাসন নেই, তবে উমাইয়্যাদের সাজানো মিথ্যা হাদিস রয়ে গেছে। তাদের পোষ্য উচ্ছিষ্টভোগী দুনিয়ালোভী আলেমদের মিথ্যা বয়ান সবখানেই বিরাজমান। ফলে সে ধারা আজো বিদ্যমান।
এই মহামানবদের শানে যত হাদিস এসেছে, তার বেশিরভাগই এসেছে মহানবী (দ.) এর সময়ের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা হিসেবে। এরপরের ঘটনা সমূহের ব্যপারে মুসলিম সমাজ খুব একটা জানে না। জানার চেষ্টাও করে না। মাওলা আলী (আ.), হযরত মা’ফাতিমা (সা.আ.), ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.) নামে হাদিসগুলি গেল কই?
মাওলা আলী (আ.) জীবন যৌবন কটিয়েছেন নবীজির সাথে। সকল যুদ্ধে তিনি ঐতিহাসিক ভুমিকা পালন করেছেন। কিন্তু তাহার নামের হাদিস গুলি আজ কোথায়?
মা’ফাতিমা (সা.আ.) যে ঘরে বসবাস করত সেটি বায়তুল অহী বা বায়তুন নূর। সেখানে নবীজির কাছে জিব্রাইল আমিন অহী নিয়ে আসতেন। অথচ মা’ফাতিমার নামের হাদিসগুলো লুকিয়ে ফেলা হয়েছে।
ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.) নবীজির ছায়ায় লালিত পালিত। অনেক হাদিস তারা বর্ননা করেছেন সেগুলিও লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
এ মহামানবদের বিষয়ে যা কিছু বর্ননা পাওয়া যায় তা শিয়াদের বানানো বলে প্রচার করা হচ্ছে।
আহলে বাইতকে শিয়াদের নিকট দিয়ে আমরা আজ নিঃস্ব।
ঈমানের মুল থেকে আমরা দূরে সরে গেছি। আহলে বাইতের শানে লিখিত কিতাবাদী, দলিল দস্তাবেজ, মাওলা আলীর খুৎবা সমগ্র নাহাজুল বালাগা, সবই আজ শিয়াদের বলে প্রচার করা হচ্ছে। আমরাও বলে বেড়াই এগুলো শিয়াদের তৈরী। শিয়াদের সব দিয়ে আমরা আজ নিঃস্ব হয়ে গছি। তাছাড়া আহলে বাইত (আ.) সহ মাওলা আলী (আ.), মা’ফাতিমা (সা.আ.), ইমাম হাসান, ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাদের বংশধরদের যারা প্রশংসা করে শান-মান, আজমত পবিত্রতা গুনাবলী সত্যতুলে ধরলে তাদেরও শিয়া বলে, আজ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে দুষমনে রাসুল (সা.) ও এজীদি মুনাফেকরা।
এই পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারছিনা। আর তাতেই আমরা নিজেদেরকে খাঁটি মু’মিন মনে করি। আসলে আমরা জানিই না, আহলে বাইতকে ভালবাসার নামই ঈমান। আসলে ঈমানের ঠিকানা চিহ্নিত করতে পরছি না!
আমরা ইবাদতের মগজ খুঁজে বের করতে পাছিনা। তা হলে কার জন্য ইবাদত? কাকে খুশি করার জন্য ইবাদত ? তা জানা একান্ত প্রয়োজন। ঈমান না থাকলে সবই বরবাদ। আজ পর্যন্ত কোন মুনাফেক মু’মিন হতে শুনি নাই, তবে বড় বড় কাফের মুশরিক মুসলমান হয়ে সাহাবী হয়েছে, মু’মিন হয়েছে, ঈমানদার আওলীয়া হয়েছে। অতএব সবাই সাবধান, ঈমানের বেলায় কোন আপোষ করা যাবে না।
পূর্বপুরুষের সাথে কারো আক্রোশ থাকলে সে আক্রোশ অনেকে তার বংশধরের মাধ্যমে শোধ নেয়ার চেষ্টা করে। সেগুলোই করেছে হিন্দা, মুয়াবিয়া, এজিদ, ইবনে যিয়াদ। এই কুলাঙ্গারদের প্রতি চিরস্থায়ী লানত বর্ষিত হোক।
আমার নবীপরিবার আমার ঈমানের অংশ, আমার ভালোবাসার সর্বোত্তম ঠিকানা। ওনাদের কদমের নিচে আশ্রয় পাওয়া চরম এবং পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। তাহলে আমার জীবন হবে সৌন্দর্যমন্তিত। আখেরাত হবে সাফল্যমন্ডিত।
পরবর্তীতে মা’জয়নব (সা.আ.) ও ইমাম আলী জায়নুল আবেদীন (আ.) কারবালার পরবর্তী ঘটনবলীতে তুলে ধরব।
– অসমাপ্ত –
আগামীতে প্রকাশিত হবে পরবর্তী অংশ।
চোখ রাখুন নিউজ ব্যাংক বাংলায়
আমাদের ঘোষণা:
আমাদের প্রকাশিত নিবন্ধ/কলাম সমূহের মতাদর্শ, বক্তব্য, দৃষ্টিভঙ্গী এমনিক এতে ব্যবহুত তথ্য, তত্ত্ব ও সকল প্রকার সূত্র লেখক কর্তৃক লিখিত, নির্ধারিত এবং সংযোগকৃত। এর যাবতিয় দায়ভার একান্তই লেখকের । আমরা, নিউজ ব্যাংক বাংলা ডট কম এর কর্তৃপক্ষ এর কোন বক্তব্য বা দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য দায়ী নই ।
লেখক পরিচিতি:
সৈয়দ আমিনুল এহেসান ফেরদৌস আল-ক্বাদমী,
পীর ছাহেব, দরবারে শাহে ক্বদমি, মিরপুর, ঢাকা ।
যুগ্ন সম্পাদক, বাংলাদেশ তরিকত পরিষদ (বিটিপি) ।
.