জন্মভূমে পা রাখতেই ভালোবাসার ফল্গুধারায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী : জানালেন, পূর্ব-পশ্চিম সম্পর্ক চমৎকার

Must Read

* শকুনের দোয়াই গরু মরে না 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আগুনঝরা সেই দিনগুলোর সাহসী ভূমিপুত্র কিংবা একুশ আগস্টের সেই ভয়াবহ গ্রেনেটে রক্তাক্ত জীবন বাজি রাখা একজন শুধু নন, ওয়ান ইলেভেনের পূর্বাপর সময়েও দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধু কন্যার ছায়া সঙ্গী এক সহকর্মীর নাম হাছান মাহমুদ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আগুনঝরা সেই দিনগুলোর সাহসী ভূমিপুত্র কিংবা একুশ আগস্টের সেই ভয়াবহ গ্রেনেটে রক্তাক্ত জীবন বাজি রাখা একজন শুধু নন, ওয়ান ইলেভেনের পূর্বাপর সময়েও দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধু কন্যার ছায়া সঙ্গী এক সহকর্মীর নাম হাছান মাহমুদ ।‌ বন-পরিবেশ, তথ্য এবং সম্প্রচারে সাফল্যের বরমাল্য নিয়ে পররাষ্ট্রের ফেলে আসা দিনগুলোর সার্থক তৎপরতাকে আরো প্রোজ্জ্বল করে বিশ্বজুড়ে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে নবমাত্রায় দায়িত্ব পাওয়া হাছান মাহমুদ বীর প্রসবিনী চট্টগ্রামেরই সন্তান। ‌

‘ইসলামাবাদ’ কিংবা বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির  উর্বর ভূমিতে তাই তাঁর বরণও হলো অন্যরকম হৃদ্যতায়।‌

নিজ জন্মস্থান চট্টগ্রামে ফিরেই মানুষের অভূতপূর্ব ভালোবাসায় সিক্ত ‌হলেন চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। জানালেন, পূর্ব-পশ্চিমে সম্পর্ক চমৎকার।

 বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নবগঠিত সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম চট্টগ্রামে এলেন আজ। অযুত সহস্র শুভার্থী বিমান বন্দরে ভিড় করেন মন্ত্রীকে বরণে ।‌ ফুলেল শুভেচ্ছা জানান তাঁরা ।‌

 

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মত মর্যাদাপুর্ণ দায়িত্ব পাওয়ায় ও তাঁকে কাছে পেয়ে আবেগে অশ্রুসিক্ত হন ভক্তদের কেউ কেউ। বৃহত্তর চট্টগ্রামের আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দও এসময় উপস্থিত হন যুথবদ্ধতায়।‌

প্রায় ১৫ বছর আগেও এমনই একদিন প্রত্যক্ষ করার সুযোগ এসেছিল আমার। সেবার উত্তর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় তাঁর গ্রামের বাড়ি অব্দি ছুটে গিয়েছিলাম। ‌সে বারের চেয়ে এবার এই ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ গোয়েবলসীয় অস্থির শীতার্ত সময়েও মানুষের হৃদয়ের উচ্ছ্বাস ও মমতার বন্ধন কমতি হয়নি একরত্তি। বরং বেড়েছে নজিরবিহীন।

শকুনের দোয়ায় যেমন কখনো গরু মরে না, তেমনি বিএনপি’র অশুভ কামনায়ও বাংলাদেশের কোন কিছু অশুভ হবে না।…

পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘শকুনের দোয়ায় যেমন কখনো গরু মরে না, তেমনি বিএনপি’র অশুভ কামনায়ও বাংলাদেশের কোন কিছু অশুভ হবে না।‌ পূর্ব-পশ্চিম সবার সাথে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। বিএনপি-জামাত দেশকে বিপদে ফেলার জন্য সব সময় চেষ্টা করেছে।‌’

 

যেদিন নির্বাচন হয়, সেদিন প্রচন্ড শীত ও কুয়াশা ছিল। সেই কারণে ভোটের পার্সেন্টেজ প্রায় ৪২ শতাংশ।  যদি কুয়াশা এবং শীত না থাকতো তাহলে আরো বেশি ভোট কাস্ট হত…..

 সবার সাথে সম্পর্ককে আরো গভীর করার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এবারের নির্বাচন যে আন্তর্জাতিকভাবে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে গ্রহণ করেছে, সেটির প্রমাণ হচ্ছে বহু নির্বাচনী পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে এসেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই, আইআরআই, ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত, সার্কভূক্ত, ওআইসিভূক্ত ও কমনওয়েলথভূক্ত দেশগুলোর পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশে এসেছেন।

এবং তারা সবাই একযোগে মত প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে । এবং এই নির্বাচনে অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম সহিংসতা হয়েছে। এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।’

‘ যেদিন নির্বাচন হয়, সেদিন প্রচন্ড শীত ও কুয়াশা ছিল। সেই কারণে ভোটের পার্সেন্টেজ প্রায় ৪২ শতাংশ।  যদি কুয়াশা এবং শীত না থাকতো তাহলে আরো বেশি ভোট কাস্ট হত। ‘  এও বললেন ড. হাছান মাহমুদ।‌

 সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বিদেশি বন্ধুদের আমাদের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ আছে, সেজন্য নির্বাচন কমিশনে গিয়েছেন। আমি আজকে কাগজে দেখলাম, নির্বাচন কমিশন যেই তথ্য উপাত্ত দিয়েছেন, এতে তারা সন্তুষ্ট হয়েছেন। ‘

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন,” দেখুন, জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশিরভাগ নিবন্ধিত দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন এই নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্থ ও প্রতিহত করার জন্য বিএনপি যেভাবে আগুন সন্ত্রাস করেছে, পাঁচ তারিখ রাতেও যেভাবে অগ্নি সন্ত্রাস চালিয়েছে, এতে করে মানুষকে ভয় লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ ভয় পায়নি, মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে গেছে। ‘

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের দিন প্রতি দু’ঘন্টায় যে তথ্য দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ম্যানুয়ালি ভোটে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর আসলে কত শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে, সেটি নির্ভুলভাবে দেয়া সম্ভবপর নয়। ইভিএমএ ভোট হলে সেটা সাথে সাথে রেজিস্টার্ড হত। যেহেতু ইভিএমএ ভোট হয়নি, ম্যানুয়াল ভোটে প্রতি দুই ঘন্টার তথ্য কোন সময় সঠিকভাবে দেয়া সম্ভবপর নয়। সেজন্য সঠিক তথ্যটা এসেছে নির্বাচনের শেষে।

 কক্সবাজারে ১৪ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থান ও তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দেখুন, ‘আমরা সবসময় কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি, আমরা তাদের সাথে আরও এনগেজমেন্ট বাড়াচ্ছি। আমি ন্যাম সামিটে যাচ্ছি, সেখানে মায়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে আমার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আমরা কূটনৈতিকভাবেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

‘আমার গাড়ির সামনে কোন একজন ভিখারিও হাত দেখালে, আমি কিন্তু দাঁড়ায়, আমি সেইভাবেই থাকত চাই। একজন রাজনীতিবীদের সবচেয়ে পরম পাওয়া হচ্ছে জনগণের ভালোবাসা, বড় মন্ত্রী হওয়া নয়। গণমানুষের নেতা ও এমপি হওয়া একজন রাজনীতিবীদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, আমি সেটিই হতে চাই। …

এদিকে বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের বাইরে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ফুলেল ভালোবাসায় সিক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আমার গাড়ির সামনে কোন একজন ভিখারিও হাত দেখালে, আমি কিন্তু দাঁড়ায়, আমি সেইভাবেই থাকত চাই। একজন রাজনীতিবীদের সবচেয়ে পরম পাওয়া হচ্ছে জনগণের ভালোবাসা, বড় মন্ত্রী হওয়া নয়। গণমানুষের নেতা ও এমপি হওয়া একজন রাজনীতিবীদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, আমি সেটিই হতে চাই। ‘

নিজের নির্বাচনী এলাকার সবাই অত্যন্ত কষ্ট করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ”আমি গত ১৫ বছর ধরে চেষ্টা করেছি গণমানুষের এমপি হওয়ার জন্য। কে আমাকে ভোট দিয়েছেন কিংবা দেননি, সেটি কখনো আমি বিবেচনায় রাখিনি। আমি প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সবসময়, কিন্তু সবমানুষের এমপি হয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমি এবারও নতুন অভিযাত্রায় সব মানুষের এমপি হিসেবে কাজ করতে চাই। যারা আমাকে ভোট দেননি কিংবা ভবিষ্যতেও দিবেন না, তাদের জন্যও কাজ করতে চাই। অবশ্যই দল এবং নেতাকর্মীদের জন্যও কাজ করতে চাই। আমি আপনাদের ভাই হিসেবে আছি। ‘

 চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সংবর্ধনার জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন,  ‘আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে আজকে প্রথম চট্টগ্রামের মাটিতে এসেছি। চট্টগ্রাম দিয়েই এদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয়েছে, আমি আল্লাহর কাছে এবং আপনাদের কাছে দোয়া চাই। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ভাইদের কাছে আশির্বাদ চাই, যাতে করে এই দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে পারি এবং দেশের মান-মর্যাদা আরও উজ্জ্বল করতে পারি। ‘

‘পূর্ব-পশ্চিম সবদেশের সাথে সম্পর্কের আরও উন্নয়ন ও বলিষ্ট করার মধ্য দিয়ে  বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।’ যোগ করেন মন্ত্রী।

 

নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, উত্তরজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, দক্ষিণ জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান, মহিউদ্দিন বাচ্চু এমপি, সাবেক এমপি নোমান আল মাহমুদ, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার,‌ বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজা, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ নেতা শফর আলী প্রমুখ।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে বরণ করতে  মহানগর ও জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি চট্রগ্রাম সিটির মেয়র মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও  জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলামের ছুটে যাওয়া মানুষের অভূতপূর্ব এই হৃদ্যতা আয়োজনকে আরো বেশি পূর্ণাঙ্গতা দেয়।

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী :  * ( সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন-সিইউজে, * সদ্য সাবেক সহ-সভাপতি, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন * সাধারণ সম্পাদক,পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ * সদ্য সাবেক সদস্য, চট্টগ্রাম মেডিকেল ইউনিভার্সিটি )

- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img
Latest News

তারেক রহমানকে দেশে ফেরার সুযোগ দিতে হবে : মির্জা ফখরুল

নিউজ ব্যাংক বাংলা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোনো রকম টালবাহানা সহ্য করা হবে না। সমস্ত মামলা প্রত্যাহার...
- Advertisement -spot_img

More Articles Like This

- Advertisement -spot_img