নিউজব্যাংক বাংলা :
আইন পেশায় নিয়োজিত আইনবিদ ও আইনজীবী সহ স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ, সুফি গবেষকদের নিয়ে সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে “ ব্যক্তি- চেতনা ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণে সুফিবাদের প্রয়োজনীয়তা প্রচারে আইনজীবীদের ভূমিকা” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে শনিবার ২রা মার্চ। সুফি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি চেতনা এবং সুফি ভাবাদর্শের সরল সৌন্দর্যকে সমাজের সর্বস্তরের নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেয়া ও আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার তাগিদ তুলে ধরা ছিল মূল লক্ষ্য।
ব্যক্তি-চেতনা ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণের আহ্বান জানানো হয়েছে সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশনের গোলটেবিল বৈঠকে।
সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান খাজা ওসমান ফারুকী (খাজা’জীর) সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সুলতান আহম্মদ মিলনায়তনে আয়োজিত উক্ত গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনায় ছিলেন দি বাংলাদেশ টুডে’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান ও সুফি গবেষক এস এম আকাশ।
এতে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী ও বার কাউন্সিলের সদস্য এডভোকেট মাহবুব উদ্দিন আহমদ, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক বার কাউন্সিলের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব এডভোকেট এ এম জিয়া হাবীব আহসান, চট্টগ্রাম আদালতের এজিপি এডভোকেট আবুল কাশেম ইউনুস, সাবেক জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শফিউল আলম, অতিরিক্ত এজিপি সেলিম উদ্দিন, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও সুফি গবেষক ড মাসুম চৌধুরী, শাহানশাহ সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারি ট্রাস্টের সচিব অধ্যাপক এ ওয়াই এম জাফর, গাউছিয়া আরজিয়া খানকাহ শরীফের সাজ্জাদানশীন শেখ ফায়সাল করিম মাইজভান্ডারি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদুদ্দিন ফারুক, দৈনিক সময়ের কাগজ এর সহ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ রানা, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের প্রধান আরমান হোসেন, ফুটন্ত কিশোর সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, এডভোকেট মীর ফেরদৌস আলম সেলিম, এডভোকেট ইব্রাহীম বিপু, এন এম সাইফুল্লাহ ও সাইফুল ইসলাম, ওয়ার্ল্ড সুফি মিডিয়া ডট কমের চীফ কোআর্ডিনেটর শাহ মিডু সহ ফাউন্ডেশনের সদস্যবৃন্দ।
আলোচকেরা বলেন,আমরা সকলেই ভ্রাতৃপ্রেম চাই আমরা সকলেই আমাদের সম্প্রদায়ে,সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই আমরা ঐক্য চাই কিন্তু আমরা যা দেখি তা হল মানবজাতি অন্য দিকে ধাবিত হচ্ছে। ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তি সর্বত্র। এখন পরিবেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে দুনিয়াসর্বস্ব বস্তুবাদের প্রকট দুর্গন্ধ। সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে অর্থহীন ও কাণ্ডজ্ঞানহীন তরুণদের জয়জয়কার। এতসব সমস্যার ভিড়ে একজন মানুষের জীবনকে অর্থবহ করে তোলার ফুরসত কোথায়..? বস্তুত বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে আমরা আর যুদ্ধটা এখানেই।
আমাদেরকে ফিরে যেতেই হবে বিশ্বশান্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আনীত সেই শান্তিময় জীবনধারায়।
আধ্যাত্মিক পথের সন্ধান করতে হবে। সুফিভাবাদর্শ বরাবরই স্পষ্টভাবে প্রেমের চাষাবাদ করতে, মানুষকে ভালোবাসতে এবং সুন্দর আদর্শ মানুষ তৈরি করতে কাজ করে।
তাই সময়ের চাহিদা ও পরিস্থিতিকে সামনে রেখে মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে গোটা মানবজাতির কাছে ইসলামের মহান শাখা সুফিবাদ এবং সুফিসাধকদের জীবনাদর্শকে নতুন বিশ্লেষণে উপস্থাপন করা খুবই অত্যাবশ্যক।
যখন বিভিন্ন অর্থহীন ও ছাইপাঁশ বস্তুকে পরিকল্পিতভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে, মিডিয়া সুনিপুণ কারিগরি দক্ষতায় বিষবাষ্প ছড়িয়ে যাচ্ছে, ঠিক সে সময়ে এসে আত্মশুদ্ধি ও শুদ্ধ চিন্তার বিকাশ কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই আন্দাজ করা সম্ভব। তরুণপ্রজন্ম আজ যে সময়ের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করছে, সময়টাকে আমরা প্রচণ্ড উত্তপ্ত ও অস্থির সময় বলে আখ্যা দিতে পারি।
সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খাজা ওসমান ফারুকী (খাজা’জী) তাঁর বক্তব্য বলেন, আধুনিক মানুষের অধিকাংশ সমস্যার গোড়ার কারণটি হলো আধ্যাত্মিক ভাবে অর্থহীন জীবন যাপন করা। পুঁজিবাদের এই চরম বিকাশকালে মানুষকে যত ভাবশূন্য করে বস্তুমুখী করা যায় ততই পুঁজিবাদীদের মুনাফা। মানুষ ভাবশূন্য হলে সে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় মানুষের মুক্তি নিহিত রয়েছে তার গোড়ায় ফেরায়,ভাবের জগতে সক্রিয় হওয়ায়,নিজেকে যথাযথ চিনে নেয়ার প্রক্রিয়ায় যেখানে তার অস্তিত্বের অর্থ নিহিত আছে। কেবল তা হলেই শত অন্ধকারেও শক্তিশালী মানুষ আপন আলোয় পথ চলতে পারে। আমাদের উদ্দেশ্য আধ্যাত্মিকতা প্রচার করা,যা সমস্ত ধর্মের ভিত্তি, এটি সবকিছুর সারমর্ম।
অস্বীকার করা যাবে না যে দেশে অপরাধ বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে, সামান্য দ্বন্দ্বে কিংবা তুচ্ছ স্বার্থে মানুষ খুনের মতো অপরাধ করতে পিছপা হচ্ছে না।
পরকীয়া, দাম্পত্য কলহ, প্রেমে ব্যর্থতা, জমি ও সম্পদ দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে খুন করছে। ধর্ষণ, গণধর্ষণ বেড়েছে, শিশুও রেহাই পাচ্ছে না, ধর্ষণের পরে খুনও বেড়েছে। আবার এলাকাভিত্তিক ক্ষমতাধর ব্যক্তির উত্থান ঘটেছে, যারা এলাকার দখল ও সর্বময় ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য খুন-জখমসহ সব ধরনের অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে।
এই অবস্থায় মানুষের মধ্যে সুস্থধারার আধ্যাত্মিকতার সরল বার্তা পৌছে দিতে না পারলে এসব আইন করে বন্ধ করা যাবে না।
ঘৃণা বা বিদ্বেষ কিংবা প্রতিহিংসার পথে কোনো সমাজের পক্ষে সত্যিকারের মহান জাতি গঠন সম্ভব নয়।আলোকিত মানুষ তৈরি করতে চাইলে সুফিসাধকদের প্রেমের পথের সন্ধান মানুষকে দিতে হবে।
পরিশেষে খাজা ওসমান ফারুকী (খাজা’জী) সকলকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন, আত্মার জমিনে করি পরম প্রেমের চাষাবাদ ।