১৩ আগস্ট আকাশবাণী বেতারকেন্দ্রে পরিবেশিত হয় গান ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান’। এই গান ছিল সংকেত। ১৪ আগস্ট অপেক্ষায় থাকেন আরেকটি গান শোনার জন্য। কিন্তু গানটি বাজেনি। পরদিন ১৫ আগস্ট শুনা যায় সেই প্রত্যাশিত গান। পরিচালিত হয় সেই লক্ষ্য নির্ধারিত অভিযান।
সকালেই গানটি বাজে রেডিওতে । ‘আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ী’।
গানটি শুনে এ ডব্লিউ চৌধুরী সহযোদ্ধাদের জানান, ‘রাতেই হবে অপারেশন।’……..
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। একদিকে বাংলাদেশে চরম হত্যাযজ্ঞ,বর্বরতা, অন্যদিকে পাকিস্তানের সাবমেরিন পি এন এস ম্যাংরো নোঙর করে ফ্রান্সের একটি বন্দরে। বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যা চালানোর কথা জানতে পেরে জাহাজটির বাঙালি নাবিকরা পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। যিনি যেভাবে পারেন পালিয়ে যেতে উন্মুখ হয়ে ওঠেন। ভারতের দিল্লি চলে যান তাঁরা। এই বাঙালি নাবিকদেরই একজন এ ডব্লিউ চৌধুরী (আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী)।
অপারেশন জ্যাকপট এর আওতায় নৌ-কমান্ডোগণ চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও একই পরিকল্পনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যেই উপুর্যুপরী চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, মংলা বন্দরে আক্রমণ পরিচালনা করেন ।
সেসব অভিযানে বিভিন্ন দেশের পতাকা বাকি জাহাজ ও পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর মোট ২৬ টি পণ্য ও সমরাস্ত্র বাহী জাহাজ- গণবোট ডুবিয়ে দিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলেন।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
পাকিস্তানি সাবমেরিন থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নৌ যৌদ্ধাদের অসামান্য বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দেন তিনি। এজন্য ‘বীর উত্তম’, ‘বীর বিক্রম’ দুই খেতাবে ভূষিত হন।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কর্মরত থেকেছেন।পরে কমোডর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।অবসর নেন ১৯৯৭ সালে। ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে ফিরে যুদ্ধে অংশ নিতে ভারতে তিন মাস প্রশিক্ষণ নেন এই বীর যোদ্ধা।প্রশিক্ষণ শেষে ছোট হরিণা সীমান্ত দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢোকেন তিনি ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক হয়, পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের দিন পরিচালিত হবে ‘অপারেশন জ্যাকপট’। এটি অপারেশনের সাংকেতিক নাম । সেই অভিযানে চট্টগ্রাম বন্দরভাগে সরাসরি নায়কোচিত ভুমিকা রাখেন নৌ-কমান্ডো এ ডব্লিউ চৌধুরী বীর উত্তম।
অপারেশন জ্যাকপট এর আওতায় নৌ-কমান্ডোগণ চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও একই পরিকল্পনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যেই উপুর্যুপরী চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, মংলা বন্দরে আক্রমণ পরিচালনা করেন ।
সেসব অভিযানে বিভিন্ন দেশের পতাকা বাকি জাহাজ ও পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর মোট ২৬ টি পণ্য ও সমরাস্ত্র বাহী জাহাজ- গণবোট ডুবিয়ে দিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলেন।
এই দুঃসাহসী অভিযান নিয়ে নৌ কমান্ডো, কমোডের এ ডব্লিউ চৌধুরীর সাথে এই কথা হয় প্রায় নয় বছর আগে। মুক্তিযুদ্ধকালীন এই নৌ-কমান্ডো সেদিন জানান মুক্তিযুদ্ধের সময় নৌ-কমান্ডোদের লক্ষ্য ও অপারেশন বিষয়ে।
খোলামেলা অনেক কথা বলেন তিনি। এই বয়সেও তাঁর প্রাণোচ্ছল কথামালা, দৃপ্ত বিশ্বাস আমাকে দারুন উজ্জীবিত করে ।
মুক্তিযুদ্ধের নৌ কমান্ডো কমোডের এ. ডব্লিউ চৌধুরীর সঙ্গে লেখক সাংবাদিক ও সংগঠক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী।
স্বদেশ মুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধের এই নৌ–কমান্ডো দলের ইস্পাত কঠিন প্রত্যয় সম্পর্কে জানান এ ডব্লিউ চৌধুরী। ‘অপারেশন জ্যাকপট’ ছিল জানবাজি রাখা এই বীরযোদ্ধাদের সবচেয়ে সফল উদ্যোগ। অপারেশনটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট।
পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ১৫ আগস্ট।১৯৭১ সালের এই দিনেই দেশের বেশ কয়েকটি নদী ও সমুদ্রবন্দরে একযোগে অভিযান চালিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন নৌ-কমান্ডোগণ ।
ফ্রান্সের তুলঁ নৌঘাঁটিতে পাকিস্তানের সদ্য কেনা সাবমেরিনে ম্যানগ্রো সাবমেরিনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন এ ডব্লিউ চৌধুরী।সেই জাহাজে ১৩ জন বাঙালি ছিলেন। ওই সাবমেরিন চালিয়েই পাকিস্তানে ফেরার কথা ছিল তাঁদের।ফিরতি গন্তব্যের সময় নির্ধারিত ছিল ৭১এর ১এপ্রিল। এর মধ্যেই বাংলাদেশে শুরু হয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বর্বরতা ২৬ মার্চেই এ. ডব্লিউ চৌধুরী সহ অন্যরা জেনে যান। সেদিনই সেই বাঙালি নাবিকরা নিজেরা একে অপরের সাথে কথা বলেন।
তাঁদের ৯ জন যুদ্ধে অংশ নিতে অভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন।তখন প্রশ্ন দেখা দেয়, কিভাবে তাঁরা নিজেদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করবেন।পাসপোর্টগুলো সাবমেরিনের লকারেই ছিল। সাবমেরিনার বদিউল আলমের(পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে বীর উত্তম খেতাব পাওয়া) সহযোগিতায় কৌশলে সেই চাবি সংগ্রহ করেন জনাব চৌধুরী।
সুরক্ষিত তুলঁ নৌঘাঁটি থেকে পালিয়ে জেনেভায় যান তাঁরা। সেদিন ছিল ২৯ মার্চ। এর মধ্যেই ঘটে যায় আরো অনেক ঘটনা।
লেখাটির বাকি অংশ দেখুন নীচের লিংক ভিডিও এর পর-
জামায়াত..শিবিরের রাজনীতি, আওয়ামীলীগ ও নির্বাচন নিয়ে আলোচিত টকশো :
মেজর জেনারেল অব ইব্রাহিম যা বললেন,
জানতে হলে লিংক চাপুন –
( ভালো লাগলে বন্ধুদের জানাতে লাইক ও শেয়ার দিন, প্লিজ ! )
৮এপ্রিল নয়জনের মধ্যে আটজন পৌঁছান ভারতে।তাঁদের এই ভারত যাত্রা নিয়েও লিখলে লেখা যায় অনেক কিছুই।
ওয়াহেদ চৌধুরী সহ সেই আট বাঙালি নাবিককে নিয়েই মুক্তিবাহিনীর নৌ উইং গঠিত হয় , যা ‘নৌ কমান্ডো বাহিনী’ হিসেবে পরিচিতি । মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে গঠিত নৌবাহিনী তাঁদের দিয়েই শুরু।
তাঁরা ৮ জনই প্রথমে যোগ দেন প্রশিক্ষক হিসেবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নৌ অভিযান পরিচালনার জন্য আরও প্রায় দুই শতাধিক সহযোদ্ধা (সুইসাইডাল স্কোয়াড) তৈরি করা হয়। তাঁদের প্রশিক্ষণ ছিল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর।
তাঁরা যাতে দীর্ঘক্ষন স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটতে পারেন সে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বিপজ্জনক মাইন, বিস্ফোরক ও বোমা বহনের যথাযত ব্যবহার শেখানো হয় তাঁদের। এই প্রশিক্ষণের জন্য অন্তত তিন বছর সময় দরকার ছিল। কিন্তু যুক্ত হওয়া তরুনদের দুই মাসের মধ্যে অপারেশনের জন্য তৈরি করা হয়। এ লক্ষ্যে দৈনিক প্রায় ১৮ ঘণ্টাও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ।
মধ্য আগস্টে নৌ কমান্ডো অভিযান সম্পর্কে এ ডব্লিউ চৌধুরী বলেন, নানা কারণে আমাদের অভিযানের প্রধান লক্ষ্য স্থল নির্ধারণ করা হয় চট্টগ্রাম বন্দর ।
‘মুক্তিযুদ্ধকালে নৌ কমান্ডো দলের লক্ষ্য ছিল নদীপথ, সমুদ্রপথ ও বন্দর ধ্বংস করা।
একই সাথে তাই বিভিন্ন বন্দরে হামলা পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি পক্ষ অর্থাৎ আমাদের শত্রুপক্ষকে কাবু করার শুধু নয়, বিশ্বকে আমাদের সক্ষমতা জানিয়ে দেয়া।’ জানান এ ডব্লিউ চৌধুরী।
অভিযানের জন্য ৮ আগস্ট ভারতের হরিনা থেকে ওয়াহেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে নৌ মুক্তিযোদ্ধা দল রওনা হন চট্টগ্রামের উদ্দেশে। দীর্ঘ যাত্রাপথে ঘটে অনেক ঘটনা।
অনেক চড়াই-উতড়াই পেরিয়ে সহযোদ্ধাদের নিয়ে ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের কাছে পৌঁছান। ১৩ আগস্ট আকাশবাণী বেতারকেন্দ্রে পরিবেশিত হয় একটি গান। ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান’। এই গান ছিল সংকেত। এটা শুধু দলনেতাই জানতেন।
এরপর তাঁর নির্দেশে সবাই প্রস্তুত হন। গোলাবারুদসহ শহর অতিক্রম করেন। পরদিন তাঁরা পৌঁছান কর্ণফুলী নদীর তীরে ।
১৪ আগস্ট অপেক্ষায় থাকেন আরেকটি গান শোনার জন্য। কিন্তু গানটি বাজেনি। পরদিন ১৫ আগস্ট শুনা যায় সেই প্রত্যাশিত গান। পরিচালিত হয় সেই লক্ষ্য নির্ধারিত অভিযান।
সকালেই গানটি বাজে রেডিওতে । ‘আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ী’।
গানটি শুনে এ ডব্লিউ চৌধুরী সহযোদ্ধাদের জানান, ‘রাতেই হবে অপারেশন।’
এরপর চৌধুরী সহ নৌ মুক্তিযোদ্ধারা চরম উৎকণ্ঠায় সময় কাটান। এই দিনে শুধু চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দেশের অন্য অঞ্চলগুলোতেও সফল অপারেশন পরিচালনা করেন নৌ কমান্ডোরাঁ ।
যেভাবে মিশন চট্টগ্রাম :
১৫ তারিখের সূর্য বিদায়ের পর থেকে গোপন ডেরায় নৌ মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুত হন।
সেদিন বর্ষণমুখর গাঢ় অন্ধকার রাত। জনাব চৌধুরী সহযোদ্ধাদের নিয়ে ছুটে যান লক্ষ্যস্হলের দিকে।
‘আমরা ৪০ জন কমান্ডো গ্রেনেড ও ডেটোনেটর, স্টেনগান ও বিস্ফোরক নিয়ে অপারেশনে যুক্ত হই। ১৫ আগস্ট রাত ১২টায় শুরু হয় আমাদের অভিযান । ‘প্রথমে তাঁরা কিছুটা পর্যবেক্ষণ করেন চারিপাশ। নিজস্ব সোর্স মারফত খোঁজখবর নেন।
রাত আনুমানিক একটা।স্রোতশ্বিনী কর্ণফুলী নদী সাঁতরে গিয়ে নৌ কমান্ডোগণ দ্রুত এগিয়ে যান জাহাজগুলোর কাছে।পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যেই তাঁরা বন্দরের ১১টি জেটি ও তিনটি জাহাজে মাইন ও ডেটনেটর স্থাপন করেন। অতঃপর এক এক জন একেক দিকে অক্ষত অবস্থায় নদীর তীরে ওঠতে প্রাণপন চেষ্টা করেন।তাঁদের কেউ কেউ দূরবর্তী তীরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন অপারেশনের সাফল্যের স্বাদ নিতে।
লেখাটির বাকি অংশ দেখুন নীচের লিংক ভিডিও এর পর-
ঢাকার বাইরের মানুষের অধিকার নিয়ে একটি আলোচিত বক্তৃতা : প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন । জানতে হলে লিংক চাপুন -( ভালো লাগলে বন্ধুদের জানাতে লাইক ও শেয়ার দিন, প্লিজ!
রাত তখন আনুমানিক দুইটা ১৫। কমান্ডাদের প্রত্যাশিত কানফাটা আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে যেন গোটা নগরী। একের পর এক বিস্ফোরণের বিকট লব্দ।ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দেন চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা পাকিস্তানিরা।
অন্য দিকে আসলে কতটুকু কী ঘটেছে, পাকিস্তানিদের ক্ষয়ক্ষতি কিরকম হয়েছে, কমান্ডোরা কেউ তখনো জানেন না। এ ডব্লিউ চৌধুরী জানান,‘পরে রেডিওর খবরে শুনতে পাই অভিযানের ফলাফল।‘
চট্টগ্রাম বন্দরে সবগুলো জেটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া এবং নয়টি ছোট-বড় জাহাজ ডুবে যাওয়ার খবর পান রেডিওতেই।
সেই অভিযানের সফল নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এ ডব্লিউ চৌধুরী সহ নৌ কমান্ডোদের প্রতি মুক্তিযুদ্ধের উত্তর প্রজন্মের নাগরিক হিসেবে অতল কৃতজ্ঞতা জানাই।
বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি।
(রিয়াজ হায়দার চৌধুরী: সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন – সিইউজে, সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য, চট্টগ্রাম মেডিকেল ইউনিভার্সিটি )
বন্ধুরা, আপনারাও পারেন কোন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে সত্য কথন তুলে ধরতে। সামাজিক মাধ্যমের সঠিক ব্যবহারের জন্যও এটি জরুরী। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নিয়ে যে কোন লেখা পাঠাতে পারেন নিউজ ব্যাংক বাংলায়। লেখা পাঠিয়ে দিন 01860694240 হোয়াটসঅ্যাপে )
NEWS BANK TV
https://youtube.com/@newsbanktv5134?si=bu6C0RzSrcOnN8VH