প্রশান্ত বড়ুয়া, চট্টগ্রাম:
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় বন্দুকধারীর ভয়াবহ হামলায় এখন পর্যন্ত শিশুসহ ১৪৩ জন নিহত হয়েছে। এ সংখ্যা যে আরো বাড়বে তাতে সন্দেহ নাই। আহত হয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে ঢুকে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে ভিড়ের মধ্যে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় বন্দুকধারীরা।
হামলায় দায় স্বীকার করেছে ‘ইসলামিক স্টেট খোরাসান’ বা আইএস-কে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। একজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আইএস’র দায় স্বীকারের পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের জড়িত থাকার বিষয়টিকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মন্তব্য করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি রাশিয়া। তবে রুশ ন্যাশনাল গার্ড জানিয়েছে, হামলাকারীদের ধরতে ঘটনাস্থলে বিশেষ ইউনিট কাজ শুরু করছে।
এছাড়া শীর্ষস্থানীয় রুশ কর্মকর্তারাও ইতোমধ্যে ক্রাসনোগর্স্কে গেছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির পার্টনার সার্ভিস সিবিএসকে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের কাছে এমন গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যার মাধ্যমে বোঝা যায় যে আইএস রাশিয়ায় হামলা চালাতে চেয়েছিল।
দুই সপ্তাহ আগে, মার্কিন দূতাবাস রাশিয়ায় অবস্থিত মার্কিন নাগরিকদের বড় ধরণের জমায়েত এড়িয়ে চলতে একটি সতর্কতা জারি করে বলেছিল, ‘মস্কোতে বড় ধরণের সমাবেশ লক্ষ্য করে জঙ্গিরা হামলা চালাতে পারে’ এমন রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখছে নিরাপত্তা বাহিনী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নতুন আরেকটি সতর্কতা দেয়া হয়েছে এবং মার্কিন নাগরিকদের হামলা হওয়া জায়গার আশপাশের এলাকা এড়িয়ে চলতে অনুরোধ করা হয়েছে।রুশ রক গ্রুপ পিকনিকের কনসার্টের জন্য ক্রোকাস সিটি হল এবং কনসার্ট কমপ্লেক্সে ছয় হাজারেরও বেশি মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ব্যান্ডটি মঞ্চে ওঠার কিছুক্ষণ আগেই হামলা শুরু হয়। যদিও পিকনিকের ব্যান্ডের সদস্যরা সবাই অক্ষত রয়েছেন।একজন নিরাপত্তা কর্মী বলেছেন, কীভাবে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হামলাকারীরা কনসার্ট হলের প্রবেশমুখে গুলি ছুড়তে শুরু করে, তিনি ও তার সহকর্মীরা তখন সেখানে কাজ করছিলেন।
নিউজ/লেখাটির বাকি অংশ দেখুন নীচের লিংক ভিডিও এর পর-
ঢাকার বাইরের মানুষের অধিকার নিয়ে একটি আলোচিত বক্তৃতা :
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন । জানতে হলে লিংক চাপুন –
( ভালো লাগলে বন্ধুদের জানাতে লাইক ও শেয়ার দিন, প্লিজ!
তিনি রুশ টেলিগ্রাম চ্যানেল বাজাকে বলেন, তিনি ছাড়া আরও তিনজন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন সেখানে এবং তারা একটি বিজ্ঞাপন বোর্ডের পেছনে লুকিয়ে ছিলেন হামলার সময়। তিনি বলেন, “আক্রমণকারীরা আমাদের থেকে ১০ মিটার দূরে ছিল, পরে তারা নিচতলায় লোকজনের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে।”ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ কয়েক ডজন অ্যাম্বুলেন্স সেখানে পাঠান এবং তা হামলার কিছুক্ষণ পর থেকেই ওই কমপ্লেক্সের বাইরে দেখা যায়। মস্কোর মেয়র সের্গেই সনিয়ানিন রাজধানীতে সব পাবলিক ইভেন্ট বাতিল ঘোষণা করেছেন। সাথে যারা স্বজন হারিয়েছে তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন।
একই সঙ্গে ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর পিটার্সবার্গসহ আরও কয়েকটি অঞ্চলে সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।
ওদিকে ইউক্রেন সরকার দ্রুতই এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন এর সাথে তাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
তবে কোন নাম উল্লেখ না করে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা মুখপাত্র আন্দ্রি ইয়সভ বলেছেন হামলার ঘটনা ‘পুতিনের স্পেশাল সার্ভিসের উষ্কানিমূলক কাজ’। তবে তিনি কোন প্রমাণ দেননি।
কারা এই আইএস-কে
ইরান, তুর্কমেনিস্তান ও আফগানিস্তানের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত খোরাসান অঞ্চলে (পুরোনো নাম) সক্রিয় থাকা একটি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট খোরাসান’ বা আইএস-কে। ২০১৪ সালের শেষ দিকে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে এটির আবির্ভাব। চূড়ান্ত পর্যায়ের নৃশংসতা দেখিয়ে দ্রুতই বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে গোষ্ঠীটি।
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসের সবচেয়ে সক্রিয় আঞ্চলিক সহযোগীর একটি আইএস-কে। ২০১৮ সালে সদস্যসংখ্যা সর্বোচ্চ হওয়ার পর থেকে তা আবার কমতে শুরু করে। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে আশরাফ গনি সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসা তালেবান এবং সেই সময় দেশটিতে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধনের পেছনেও আছে গোষ্ঠীটির হাত।
টার্গেট কেন রাশিয়া
শুক্রবার সন্ধ্যায় হঠাৎই রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় হামলা চালায় আইএস-কে। এটি তাদের সহিংস কর্মকাণ্ডে এক নাটকীয় বৃদ্ধি হিসেবে দেখা হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গোষ্ঠীটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধিতা করে আসছিল।
এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সোফান সেন্টারের কলিন ক্লার্ক বলেন, ‘দুই বছর ধরেই রাশিয়াকে নিশানা করেছে আইএস-কে। তারা তাদের প্রচারণায় প্রায়ই পুতিনের সমালোচনা করে আসছে।’
ওয়াশিংটনভিত্তিক আরেকটি প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, রাশিয়াকে নিয়মিতভাবে মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা একটি দেশ হিসেবে দেখে থাকে আইএস-কে। আইএস-কে মস্কোর বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগের পক্ষে মধ্য এশিয়ার কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নিজেদের সদস্যর মতো বিবেচনা করে থাকে।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় শুক্রবার (২২ মার্চ) রাতে এক কনসার্ট হলে বন্দুকধারীর হামলায় কমপক্ষে ১৪৩ জন নিহত হয়েছে। এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আকস্মিক এমন ঘটনাকে একটি ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অভিহিত করে নিন্দা জানিয়েছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী।
রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, হামলাকারীরা গুলির পাশাপাশি বিস্ফোরকও ব্যবহার করেছে। এতে ক্রোকাস সিটি হলে আগুন ধরে যায়। ধসে পড়ে হলের ছাদ।
রুশ বাহিনীর কর্মকর্তারা কনসার্ট হলটি পরিদর্শন করেছেন। জরুরি পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসস্তুপ পরিস্কারের কাজ শুরু করেছে। একই সাথে তথ্য প্রমাণ জব্দ ও সিটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের কাজ করছে তদন্ত কর্মকর্তারা।
বিবিসি বাংলা জানায়, ক্রাসনোগর্স্কের উত্তর-পশ্চিম শহরতলিতে ক্যামোফ্লজ গিয়ার বা সৈনিকদের মত পোশাক পরা অন্তত চার ব্যক্তি এ হামলা চালিয়েছে। ক্রোকাস সিটি হলে বন্দুকধারীরা যখন এর প্রবেশ মুখে এবং পরে থিয়েটারের ভেতরে বিস্ফোরণ ঘটায়, তখন সেখানে একটি রক কনসার্ট আয়োজন করা হচ্ছিল। ভবনের বেশিরভাগ অংশ আগুনে পুড়ে গেছে এবং ছাদের কিছু অংশ ধসে পড়েছে।
রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী বলছে, কনসার্ট হলে আগুন লাগাতে হামলাকারীরা দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করেছিলো।
এদিকে মস্কোয় কনসার্ট হলে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় ১১ জনকে আটক করেছে রুশ গোয়েন্দা সংস্থা। সন্ত্রাসীদের অন্য সহযোগীদের চিহ্নিত করে হামলার সব পরিস্থিতি উদঘাটনের কাজও চলছে। ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতায় ক্রোকাস সিটি হলে সন্ত্রাসী হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া চার সন্ত্রাসীসহ ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মস্কোতে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
এফএসবি জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে হামলা চালানোর পর হামলাকারীরা গাড়িতে করে পালানোর চেষ্টা করে। তারা রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তের দিকে পালিয়ে যাচ্ছিল।
সংস্থাটির মতে, নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশের সুসমন্বিত পদক্ষেপের ফলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চল থেকে চার সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়।