বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং একজন বঙ্গবন্ধু

Must Read

# মফিদা আকবর #

বাংলাদেশ। একটি স্বাধীন দেশ। ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে যার সীমানা। অবশ্য আন্তর্জাতিক মামলায় রায় হিসেবে সমুদ্র বিজয়ে বাংলাদেশের আয়তন এখন আরেকটি বাংলাদেশের সমান বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ নামের ভূখণ্ডটি উর্বর এবং সুজলা সুফলা প্রকৃতি। মিঠা পানি আর প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের এ দেশটি। গঙ্গা আর ব্রহ্মপুত্র এই দুই বিশাল নদ-নদীর অববাহিকায় গঠিত বাংলাদেশ। প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের এক অতি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবেই পরিচিত। তাই এ উর্বরা ভূমির প্রতি বিদেশিরা আকৃষ্ট ছিল বরাবরই।

বাংলাদেশের ইতিহাসের সূচনা করতে হলে কিছুটা পেছনের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর বিষয় নিয়ে আলোকপাত করতে হয়। না হলে কিছু কিছু বিষয় অসম্পূর্ণ থেকে যায়। প্রথমে বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার ঘটনা দিয়েই শুরু করি : ১৭৫৭ সালের ঘটনা। ১৭৫৭ সালের জুন মাসে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতন হয়েছিল। এ পতনের মূল কারণ ছিল বিশ্বাসঘাতকতা। কিছুসংখ্যক বাঙালি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। যারা বাংলার ইতিহাসের অধ্যায়কে কলঙ্কিত ও ঘৃণিত করেছিলো।

আজো বাংলার মানুষ তাদেরকে ঘৃণাভরে স্মরণ করেন। তারা হলো : মীর জাফর, উমি চাঁদ, রাজবল্লভ এবং জগৎ শেঠ। এসব কলঙ্কিত অধ্যায় পথের ক্রম ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশরা এ দেশে প্রায় দুইশত বছর শাসন এবং শোষণ করে। তখন পূর্ব বাংলা প্রাচীন পাক-ভারতের একটি সমৃদ্ধ ভূখণ্ড মাত্র। উল্লেখিত পূর্ব বাংলাই কি করে ‘বাংলাদেশ’ হিসেবে রূপান্তর হয়েছিলো, কার নেতৃত্ব, আন্দোলন-সংগ্রামে এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রের সাথে আরো একটি মানচিত্র যোগ হলো এরই ধারাবাহিক নিরীক্ষণ সংক্ষেপে নিম্নরূপ :

ব্রিটিশ পাক-ভারত থেকে অপসারিত হয় ১৯৪৭ সালে। আর ১৯৪৭ সালেই ভারত ভাগ হয়ে দুটি দেশের জন্ম হয়। একটি ভারত অপরটি পাকিস্তান। পাকিস্তানের একটি সমৃদ্ধ অংশ পূর্ব বাংলা। পূর্ব বাংলা থেকে পূর্ব পাকিস্তান এবং পরে আজকের ‘বাংলাদেশ’।

আগেই উল্লেখ করেছি, প্রাচীন আমল থেকেই এই সমৃদ্ধ জনপদের প্রতি ছিল বিদেশিদের তীব্র আকর্ষণ। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, প্রাচীন যুগে আর্যরা, মধ্যযুগে তুর্কী ও মুঘলরা, এরপর গোরারা বাস করেছে এবং শাসন করেছে এ দেশ। মুঘলদের পতনের পর ব্রিটিশরা ভারত দখল করে। মূলত বাণিজ্যের নামে ভারতে প্রবেশ করেছিলো ব্রিটিশরা।

নেপথ্যে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ রাজশক্তির পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ আনুকূল্য সবসময় সক্রিয় ছিলো। কেন্দ্রীয় সাম্রাজ্যবাদের আনুষ্ঠানিক শাসনদণ্ড অধিগ্রহণের মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে এই অবিচ্ছিন্ন বণিক শক্তির শেকড় প্রোথিত হয় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। ভারতবর্ষ জুড়ে ব্রিটিশের আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়। ব্রিটিশের আধিপত্যের কারণে ভারতবর্ষের জনগণ ক্রমাগত নির্যাতিত, নিগৃহীত হয়ে চলেছিলো নিজভূমে। এই সামন্তীয় রাজনৈতিক ধারা প্রবাহের ব্যাপ্তি হচ্ছে ১৭৫৭ থেকে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জন্মের আগ পর্যন্ত। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের শেষদিকে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং ভারত বিভক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান নামক ধর্মভিত্তিক একটি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

সংক্ষিপ্ত পরিসরে ইতিহাসের পর্যায়ক্রমিক ধারায় বাংলাদেশের ইতিহাস বলতে গেলে উনিশ শতকের শেষদিকে ব্রিটিশ শাসন- শোষণের বিরুদ্ধে ভারতের জনগণ ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ভারতের সর্বত্র রাজনৈতিক পরিপক্কতার অভাব ছিলো তখন। ঐতিহাসিক কারণেই ভারতের জনগণ তখনও পর্যন্ত আধুনিক রাজনীতি অর্থাৎ গণতান্ত্রিক রাজনীতির শান্তিপূর্ণ নিয়ম-নীতি সম্পর্কে অনেকটাই অজ্ঞ ছিলো। ১৮৮৫ সালে ভূমিষ্ঠ হওয়া কংগ্রেস শুরুর পর্যায়ে একটি অসাম্প্রদায়িক সর্বভারতীয় গণতান্ত্রিক চরিত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও কিছুদিনের মধ্যেই এই সর্বজনীন রাজনৈতিক সংগঠনটি তার সর্বভারতীয় গণতান্ত্রিক চরিত্রটি ভুলে যায়। এ সময় কংগ্রেসের চেহারায় দু’টি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। এই পরিবর্তিত অবস্থার একটি ইতিবাচক হলেও অপরটি ছিলো নেতিবাচক এবং আত্মঘাতীমূলক।

সর্বভারতীয় জাতীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে কংগ্রেস তার সর্বভারতীয় জাতীয় চরিত্রটি হারিয়ে সংগঠনের কর্মসূচিতে সমাজের ব্যাপক সাধারণ জনগণের চাহিদার বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত করে না। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, কংগ্রেসের রাজনীতিতে ভারতের কৃষক, শ্রমিক, নিম্ন আয়ের গণমানুষ এবং বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোন বিষয় তেমন করে স্থান পায়নি। বরং খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে কংগ্রেস ইংরেজি শিক্ষিত হিন্দু মধ্যবিত্ত এবং বুর্জোয়া সামন্তদের স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশে সমৃদ্ধ হয়ে উঠে। সংগঠনের নেতৃত্বে ক্রমেই সম্প্রদায় বিশেষ হিন্দু জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থান প্রকাশ পেতে থাকে। ফলে ভারতের অপেক্ষাকৃত পশ্চাৎপদ মুসলমান জনগোষ্ঠীর জন্যে অপর একটি আলাদা সংগঠন অনিবার্য হয়ে পড়ে। এরকম একটি পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ভারতের মুসলমানগণ উপলব্ধি করেন বিপরীতমুখী একটি সংগঠনের। এরই প্রেক্ষিতে ১৯০৬ সালে সম্প্রদায়ভিত্তিক দল মুসলিম লীগের জন্ম হয়।

বিশাল দেশ ভারত। বিপুল জনগোষ্ঠীর অধ্যুষিত দেশে ইংরেজদের বিভক্তিকরণের মাধ্যমে শাসন নীতিকে কৌশলে কাজে লাগিয়ে মুসলিম লীগ নেতা ভারতীয় রাজনীতিতে তার অবাঙালি পূর্বসূরীদের চিন্তার ফসল ‘দ্বিজাতি’ নামক এক অসাড় তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়ে গেলেন। ভারতীয় রাজনীতির প্রতি অকস্মাৎ বিতশ্রদ্ধ জিন্নাহ ধর্মের ছুরি দিয়ে অবাধে দ্বিখণ্ডিত করে ফেললেন ভারতীয় জনগোষ্ঠীকে। পাশ্চাত্যবাদী আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জিন্নাহ তার ব্যক্তি জীবনে ধর্মভীরু না হয়েও মুসলিম লীগের রাজনীতিতে ধর্মকেই অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগালেন। জাতীয় কংগ্রেসও জিন্নাহর ভারত বিভক্তির দাবির কাছে নতজানু হয়ে পড়লো।

গান্ধী-নেহরুর ভিতরেও তেমন একটি বিষয় বোধ করি সন্তর্পণে লালিতই ছিলো হিন্দু অধ্যুষিত ব্যবচ্ছেদকৃত স্বাধীন ভারতের অস্তিত্ব হৃষ্ট চিত্তেই মেনে নিলেন তাঁরা।

১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের কনভেনশনে লাহোরে সমবেত হলেন তৎকালীন ভারতের জনগোষ্ঠীর একাধিক নেতা। পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান একটি আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

ভারত বিভক্তির মাধ্যমে আলাদা রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে মুসলমানদের ভাগ্য পরিবর্তিত হওয়ার চেয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের ভাগ্যবিড়ম্বিত হওয়ার বিষয়টিই বারবার সামনে চলে আসছিল। ধর্মীয় কারণে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় ‘পূর্ব বাংলা’।

একসময় প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হয়ে পূর্ব বাংলা হয়ে যায় পূর্ব পাকিস্তান। এরকমই পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তান ধর্মীয়ভাবে একই মতাবলম্বী হলেও শেষ পর্যন্ত ভাষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির জন্য মানুষ আলাদা হতে বাধ্য হয়। কারণ খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ এই সত্যটি উপলব্ধি করলো যে, এটা শুধু একচেটিয়া প্রভুত্বের হাত বদল হয়েছে।

পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকদের মূলত দ্বন্দ্বের শুরু প্রধানত ভাষার অধিকার এবং স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে। কেন্দ্র থেকে বারোশ’ মাইল দূরবর্তী একটি প্রদেশ পূর্ব-বাংলায় পশ্চিম পাকিস্তানের অভিজাত গোষ্ঠী তাদের শাসন-শোষণ নিরঙ্কুশ রাখার স্বার্থে বিশেষত দুটি বিষয়ের উপর সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়ার নীতি অবলম্বন করেন। এর মধ্যে একটি হলো ভারত ভীতি, অপরটি হলো ধর্ম। যে কারণে দেখা গেছে, যখনই ধর্মভীরু পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনচেতা জনগণ ন্যায্য দাবি কিংবা অধিকারের প্রশ্নে দাবি উত্থাপন করেছে অথবা পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের বিষয়গুলোকে অভিযোগ আকারে সামনে এনেছে তখনই পূর্ব বাংলার জনগণকে ভারতের চর বা কাফের হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। প্রকাশ্যেই দেশদ্রোহী হিসেবে দেশের জনগণকে চিহ্নিত করেছে আইয়ুব খানরা।

বস্তুতপক্ষে বাঙালিদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানীদের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বৈষম্য এবং ব্যাপক অন্যায় আধিপত্যের জন্যই মুসলিম লীগের কিছুসংখ্যক আত্মসচেতন, উদারপন্থী ও অসাম্প্রদায়িক নেতৃত্ব আবার প্রয়োজন বোধ করেন আরও একটি আলাদা সংগঠনের। এরই প্রেক্ষিতে ২৩ জুন, ১৯৪৯ সালে ঢাকার কে.এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে এক রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত রাজনৈতিক সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে আরো একটি আলাদা রাজনৈতিক সংগঠনের জন্ম হয়। যার নাম দেয়া হয় ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’। এর সভাপতি নির্ধারিত করা হয় মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয় সর্বসম্মতিক্রমে শেখ মুজিবুর রহমানকে, যদিও তিনি সে সময় জেলে ছিলেন।

পরবর্তীকালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে শেখ মুজিবকে সভাপতি করে দলমত, ধর্ম, নির্বিশেষে একই ব্যানারে বা পতাকাতলে সর্বসাধারণকে নিয়ে আসার জন্য প্রগতিশীল দল হিসেবে ‘আওয়ামী লীগ’ নামে পরিচিতি লাভ করে দলটি। আওয়ামী লীগের পতাকাতলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালিদের ন্যায্য দাবী-দাওয়া এবং অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয় বাঙালিরা। দীর্ঘদিনের অবহেলা, অন্যায়, নির্যাতন, নিপীড়নে বাঙালিদের একসময় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। উপায়ন্তর না পেয়ে বাঙালি-মাত্রই রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হয় মুজিবের ডাকে।

কারণ পূর্ব বাংলার জনগণকে পশ্চিম-পাকিস্তানীরা শুরু থেকেই আশ্রিত হিসেবে গ্রহণ করেছিল। এরপর প্রথমেই বাঙালিরা ধাক্কা খায়

ক. ভাষা প্রশ্নে। কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রীয় ভাষার সমর্থনে উর্দুকেই ইসলামী ভাষা হিসেবে দাবি করলেন এবং এর বিরুদ্ধে বাংলায় যখন বাংলা ভাষার প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের দাবি উঠলো তখন পাকিস্তানীরা বাংলা ভাষাকে হিন্দুদের ভাষা বলে এটা প্রমাণ করতে চাইলো যে, বাংলা মূলত সংস্কৃতেরই একটি অপভ্রংশ। বাংলাকে ‘বিজাতীয়’ ভাষা বলেও উপহাস করা

হলো।

পশ্চিমাদের মতে, এই ভাষা ব্রাহ্মণ্যবাদীদের ভাষা। ফলে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে কিছুতেই বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় অন্তর্গত হয়ে স্বীকৃতি লাভ করতে পারে না। অর্থাৎ আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান তথা তাদের মতে, ‘উর্দু’ একমাত্র উর্দুই হবে পূর্ববাংলার রাষ্ট্রীয় ভাষা।

খ. পাকিস্তান সেনাবাহিনির কোনো একটি ক্যাডেট কোর্সে গড়পড়তা ১৫০ জন শিক্ষানবিস থাকলেও সেখানে বাঙালির সংখ্যা থাকতো নিতান্তই সাত থেকে আটজন। অকস্মাৎ খুব বেশি হলে বারো থেকে পনেরোজনের উপরে নয়। এই স্বল্পসংখ্যকের ওপর আবার ছাঁটাইয়ের খড়গ তো ছিলোই। অত্যন্ত সূক্ষè কৌশলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই পশ্চিমাদের হিংস্রতা প্রকাশ পেতো বাঙালিদের উপর।

গ. পূর্ব বাংলার সমস্ত আয়ের হিস্যা জমা হতো পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।

ঘ. পূর্ব বাংলার অর্থকড়ি দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে গড়ে উঠতে থাকলো মিল-কারখানা। অর্থাৎ শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রুত সমৃদ্ধ হতে থাকলো পশ্চিমের প্রতিটি প্রদেশ।

ঙ. চাকরি ক্ষেত্রেও প্রাধান্য পেতে থাকলো পশ্চিমারা। পূর্ব বাংলার জনগণ নিজ দেশে আশ্রিত এবং রিফিউজি হিসেবেই আখ্যায়িত হতে থাকলো সর্বত্র।

চ. পূর্ব বাংলায় ব্রিটিশ আমলে যে উন্নয়ন হয়েছিল পশ্চিমা শাসনামলে এর ছিটেফোটাও হয়নি।

ছ. পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নীতিতে ঐক্যের নামে যে, অস্পৃশ্য দর্শনের চর্চা করা হতো তার একটি দিক ছিলো

 যেমন : ১৯৬৫ সালে কাশ্মীর প্রসঙ্গ নিয়ে ভারতের সাথে যুদ্ধের আগ পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানের ৪৪ শতাংশ মানুষের প্রতিরক্ষার জন্য নিয়োজিত করা হয় ১২টি পদাতিক ও স্বতন্ত্র ব্রিগেডসহ আনুমানিক ২টি ট্যাংক ডিভিশন। এর বিপরীতে পূর্ব পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ ছিলো ৩টি পদাতিক ব্রিগেডের সমন্বয়ে গঠিত ১টি মাত্র ডিভিশন। বিমান বাহিনীর ৯৫ শতাংশই ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানের। পূর্ব পাকিস্তানে ছিলো সামরিক উপস্থিতির নিদর্শনস্বরূপ মাত্র ১০টি স্যারের এফ ৮৬ জঙ্গি বিমান। নৌবাহিনীর সবটাই ছিলো পশ্চিমে। পূর্ব পাকিস্তানের জলসীমায় ছিলো গোটাতিনেক সেকেলে ধরনের গানবোট।

জ. বর্ণ বৈষম্যও একটি বিষয় ছিল। পশ্চিমারা পূর্ব পাকিস্তানীদের কালো বর্ণের এবং দৈহিক কম উচ্চতার জন্যও খুব ঘৃণার চোখে দেখতো।

ঝ. খাবার-দাবার, পোশাক-আশাকসহ বাঙালিদের প্রত্যেকটি বিষয়েই পশ্চিমাদের এলার্জি ছিলো।

এরকম অসংখ্য বিষয় আছে যা উপলব্ধি করা যায় কিন্তু অনেক সময় তা প্রকাশ করা যায় না। বিষয়গুলো গভীরভাবে উপলব্ধি করলেই বোঝা যেতো।

বাঙালির এই তীব্র আত্মোপলব্ধি থেকেই একদিন শুরু হয়েছিল ’৫২’র ভাষা আন্দোলন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৫ সালের আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ গণঅভ্যুত্থানের গণচৈতন্যের সংগ্রাম-আন্দোলনের ভেতর দিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসে এ দেশের সংগ্রাম-আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের এবং স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে রক্তাক্ত পথ মাড়িয়ে পূর্ব-বাংলার জনগণরা ততোদিনে অনেকখানি দুর্মর পথ হেঁটে এসেছে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের দিকে। এই পরিস্থিতিতেই ১৯৬৯ সালের গণজাগরণের মধ্য দিয়ে প্রায় দুই দশকের আন্দোলনের তিক্ত অভিজ্ঞতায় বাঙালিরা আশাবাদী হয়ে উঠেছিলো। কারণ, পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক মানসিকতার ব্যাপক প্রয়োগ পূর্ব বাংলার মানুষের মনে প্রকারান্তরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ারই সৃষ্টি করে। ’৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, পরবর্তীকালে ৬ দফার ভিত্তিতে ’৬৮, ’৬৯’র গণজাগরণ এবং ’৭০-র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়-এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালির আপসহীন মনোভাবের চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রকাশ পেয়েছে।

’৪৭ সাল থেকে ’৭১দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হীনমন্যতা এবং বৈষম্যমূলক আচরণ বাঙালিদের নিজেদের জাতিসত্তা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সর্বোপরি, মাতৃভাষা, নিজভূমে স্বাধীনভাবে বাঁচার, বসবাসের অধিকারের প্রতি দ্রুত মনোযোগী করে তুলেছিল ক্রমান্বয়ে।

আগেই উল্লেখ করেছি, মুসলমানদের স্বার্থরক্ষার জন্য ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলিম লীগের দাবির প্রেক্ষিতে আইন সভায় পৃথক নির্বাচন প্রথা চালু হয়। ১৯২০ সালে খেলাফত আন্দোলন এবং ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের রাজনীতি উচ্চ শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

তাদের কর্মসূচির মধ্যে কৃষক-শ্রমিকের দাবি ছিল উপেক্ষিত। শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক নিপীড়িত কৃষকের পক্ষে কৃষক প্রজা আন্দোলন শুরু করেন। তাঁর আহ্বানে বাংলার কৃষকসমাজ দারুণভাবে সাড়া দেয়। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর তিনি বাংলার প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৪০ সালে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রস্তাব করেন। পরে মুসলিম লীগ তার প্রস্তাবকে পরিবর্তন করে পাকিস্তান দাবি করে। ১৯৪২ সালে কংগ্রেস মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন শুরু করে। ১৯৪৬ সালে নির্বাচনের পর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বাংলার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি দেখলেন মুসলিম লীগের পাকিস্তান এবং কংগ্রেসের অখণ্ড ভারতের অধীনে বাংলার ভবিষ্যৎ রক্ষিত হবে না। তাই তিনি স্বাধীন বৃহত্তর বাংলার দাবি করেন। ইংরেজ সরকার স্বাধীন বাংলার দাবি উপেক্ষা করে ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি করে। বাংলা বিভক্ত হয়ে পূর্ববঙ্গ চলে যায় পশ্চিম পাকিস্তানের অংশে এবং ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় পশ্চিমবঙ্গ।

স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে রাজা শশাঙ্ক, পাল রাজা, গৌড়ের সুলতান, ও বারো ভুঁইয়াগণ। এরপর স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।

উপরোক্ত আপসহীন ত্যাগী নেতাগণের দেখা স্বপ্নকে লালন করে এবং বুকে ধারণ করে যোগ্য এবং আপসহীন নেতৃত্ব দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন একজন, যিনি বিশ্বের বুকে বাংলার মানচিত্রকে সমুন্নত করে চিহ্নিত করেন বিরল ভূমিকায় দাপটের সাথে তিনি হলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

শেখ মুজিব এ দেশের সূর্য সন্তান। এদেশে তাঁর জন্ম না হলে এ দেশ আজকের বাংলাদেশ হয়ে উঠতো কিনা কে জানে? এ বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা পুরুষ শেখ মুজিব স্বপ্ন দেখেছিলেন এদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে রূপান্তরিত করবেন। আজকে সেই দেশ সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে এবং হবেই ইনশাল্লাহ।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বাঙালির ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু বরাবর রুখে দাঁড়িয়েছেন এবং তেইশ বছর ধরে অন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধু আইয়ুব-ভুট্টোদের কোপানলে পড়ে বলা চলে, যৌবনের অর্ধেক সময় জেলে কাটিয়েছেন (অর্থাৎ চৌদ্দ বছর)। এরপরও তিনি বাঙালির ন্যায্য আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াননি কখনো।

সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আপসহীন ও যোগ্য সময়োপযোগী নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিররঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ট আসন পেয়ে বিজয় লাভ করে। এ সময় আইয়ুব-ভুট্টোরা ক্ষমতা নিয়ে তালবাহানা শুরু করলেন। নির্বাচিত নেতার হাতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ঘৃণ্য চক্রান্ত এবং পাঁয়তারা শুরু করলেন। এ সময় অর্থাৎ এক মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু নিয়মতান্ত্রিকভাবে অসহযোগ আন্দোলন করতে থাকলেন সারাদেশে। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে ভাষণ বাঙালির মনে মন্ত্রমুগ্ধের মতো যাদুকরি কাজ করেছিলো মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়। পঁচিশ মার্চ মধ্যরাতে যখন ঘুমন্ত বাঙালিদের উপর পাকিস্তানিরা অপারেশন সার্চলাইট নামক যে যুদ্ধ শুরু করেছিলো সে যুদ্ধে সেদিন বঙ্গবন্ধুর এ বিরল ভাষণই মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান হিসেবে মন্ত্রমুগ্ধের মতো কাজ করেছিলো মুটে মজুর থেকে শুরু করে আপামর বাঙালির মনে।

সেদিন জীবন বাজি রেখে বাংলার মানুষ মুক্তির অন্বেষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো স্বাধীনতার যুদ্ধে। এভাবেই সেদিন বীর বাঙালিরা এ দেশের বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলো ত্রিশলাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে মাত্র নয় মাসের মাথায়।

এরপর স্বাধীন এবং যুদ্ধবিদ্ধস্থ বাংলাদেশ ও বাঙালিদের সুখ-দুখের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে এ দেশকে একটি সুখি-সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জীবন বাজি রেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । তখন এ দেশের রিজার্ভ ব্যাংকে কোন কারেন্সি, সোনাদানাসহ কিছুই ছিলো না। শূন্য হাতে অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পর এ বাংলাকে আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতি এনে দিয়েছিলেন। মাত্র নয় মাসের মাথায় একটি সমৃদ্ধ সংবিধান দিয়েছিলেন এ জাতিকে।

বঙ্গবন্ধুর মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে এ বাংলাকে সোনার বাংলায় পরিণত করার জন্য যেসব উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা তিনি করে যেতে পারেননি। কারণ, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের মতো একটি কালোরাত্রি নেমে এসেছিলো তাঁর জীবনে। শুধু তাঁর জীবনে কেন? বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা এবং শিশু রাসেলসহ পরিবারের সতেরোজন লোকের উপর নেমে এসেছিলো এ ঘৃণ্য, বর্বর ও নির্মম হত্যাকাণ্ড। যা বিশ্বের কাছেও একটি জঘন্য এবং নির্মম হত্যাকাণ্ড হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। সেদিন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা বিদেশে ছিলেন বলে মহান আল্লাহর অপার কৃপায় বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁরা।

তবে সুখের বিষয় হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর সেসব অসম্পূর্ণ কাজ ধীরে ধীরে হচ্ছে তাঁরই ঔরসজাত কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেসব কাজ করে পিতার দেখা স্বপ্ন বাংলাকে সোনার বাংলায় পরিণত করার চেষ্টা করে চলেছেন নিজের জীবনকে বাজি রেখে। কারণ, এ পর্যন্ত তাঁর জীবনের উপরও একুশে আগস্টের ন্যক্কারজনক হামলাসহ একুশবার হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। তবু তিনি একাই হাঁটছেন দীর্ঘ বন্ধুর পথে কারণ, তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। জয়তু শেখ হাসিনা। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক পরিচিতি :

 মফিদা আকবার। দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক সহ-সম্পাদক । ৩৩ বছর কাজ করেছেন গণমাধ্যমে। ইত্তেফাকই তার কর্মব্যপ্তি। ষাট দশকে জন্ম। সাংবাদিকতার পাশাপাশি গবেষণা কাজ করছেন ।‌ বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে তাঁর অজস্র লেখা।‌।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নে ২৫ বছর বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হয়েছেন বিপুল ভোটে। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের তিনি প্রথম নির্বাচিত নারী এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলেরও প্রথম নারী সদস্য তিনি।

এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য।‌ পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী বাস্তহারা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশ কৃষক লীগেও সহ-সভাপতি হিসেবে আছেন ।

মফিদা আকবর একজন নিভৃতচারী লেখক। ইতোমধ্যে তার লেখা ৯৩ টি গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সর্বাধিক বইয়ের লেখক তিনি (১৭ টি)।

তাঁর উপন্যাস বিশটি, কাব্যগ্রন্থ চারটি, ছোট গল্প চারটিসহ অন্যান্য  শিশুতোষ গ্রন্থ রয়েছে। তাঁর পিতা মো: মফিজুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং চারবার ইউপি চেয়ারম্যান, ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। মাতা মরহুমা মেহের সুলতানা খানম। স্বামী মরহুম মোঃ আলী আকবর, সাবেক রেলওয়ে কর্মকর্তা। তিন কন্যা সন্তানের জননী তিনি।

- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img
Latest News

নির্বাচন করবেন না অলি আহমদ

নিউজ ব্যাংক বাংলা : আর নির্বাচন করবেন না লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ড.কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম।নিজের সন্তানকে...
- Advertisement -spot_img

More Articles Like This

- Advertisement -spot_img